মৃত‌্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনায় মুফতি হান্নানের আবেদন

সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা ও পুলিশসহ তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনায় আবেদন করেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 02:36 PM
Updated : 23 Feb 2017, 02:36 PM

বৃহস্পতিবার মুফতি হান্নানের সঙ্গে আরও দুই ফাঁসির আসামি শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনও রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছেন আপিল বিভাগে।

তিন আসামির পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড নাহিদ সুলতানা রিভিউ আবেদন করেন বলে জানিয়েছেন মুফতি হান্নানের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী।

তিনি বলেন, মোট ১০০ এরও বেশি পৃষ্ঠার আবেদনে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়েছেন আসামিরা।

রিভিউ আব্নে নাকচ হয়ে গেলে এই তিন জঙ্গির আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটবে। তখন দণ্ড এড়াতে শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন তারা।

প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি নাকচ করে দিলে মৃত‌্যুদণ্ড কার্যকরের উদ‌্যোগ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ৭ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ এই মামলায় হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে।

আপিল বিভাগের রায় হাই কোর্ট হয়ে নিম্ন আদালতে যাওয়ার পর বিচারিক আদালত মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে এবং তা গত ৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছায়। সেখানেই তাদের মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়।

মামলা বৃত্তান্ত

সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন। আনোয়ার চৌধুরী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক।

হামলায় ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন। এছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে।

আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন।

পুলিশ ওইদিনই সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ৭ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

যথাযথ ঠিকানা না থাকায় মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজার নাম প্রথমে বাদ দেওয়া হলেও পরে তাকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই বছর নভেম্বরে হয় অভিযোগ গঠন।

৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল রায় ঘোষণা করেন।

আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় বিচারিক আদালতের রায়ে।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মুত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) শুনানি শেষে গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

তাতে আসামিদের আপিল খারিজ হয়ে যায়, মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল থাকে।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন হান্নান ও বিপুল। আর দেলোয়ারের পক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।

গত বছরের ৭ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও ওই তিন আসামির সর্বোচ্চ সাজার সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।