মেলায় আসছে বিপিএল’র পাঁচ বই

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড (বিপিএল) থেকে প্রকাশিত পাঁচটি নতুন বই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2017, 05:17 PM
Updated : 23 Feb 2017, 07:45 AM

এসব বইয়ের মধ্যে দুটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে। হায়াৎ মামুদের অনুবাদগ্রন্থ ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: হুমায়ূন কবির’ এর পাশাপাশি অভিজিৎ রায়, ফরিদ আহমেদ, কুলদা রায় এবং এম এম আর জালালের গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘রবীন্দ্র বিতর্ক: বঙ্গভঙ্গ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’।

ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আসছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুনের ‘বনে বেড়াই’ শীর্ষক ভ্রমণকাহিনি সংকলন। আলোকচিত্রীদের নানা জিজ্ঞাসার উত্তর মেটাবে আলোকচিত্রী প্রীত রেজার ‘প্রীত রেজার মুখোমুখি; আলোকচিত্রের ষোল দিকপাল’ বইটি।

বিপিএল থেকে আসছে খালেকুজ্জামান ইলিয়াসের অনুবাদগ্রন্থ ‘স্যার জেমস জর্জ ফ্রেজারের গোল্ডেন বাউ’ বইটি।

এছাড়া ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে বিপিএল থেকে প্রকাশিত ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ইসলাম প্রশ্নোত্তরে মওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্র্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষে অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বিশ্ব পটভূমিকায় রবীন্দ্রনাথের সাধনা ও কীর্তিকে কেন্দ্র্র করে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বক্তৃতা দেন। সে-ভাষণ গ্রন্থাকারে ‘Rabindranath Tagore’ শিরোনামে ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হলেও বাংলা ভাষাভাষীর কাছে প্রায় অজ্ঞাত থেকে গেছে। হায়াৎ মামুদের ভাষান্তর আলো ফেলেছে দুষ্প্রাপ্য সেই রচনার উপর। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন জাফরুল হাসান লেমন।

‘রবীন্দ্র বিতর্ক: বঙ্গভঙ্গ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’

কলকাতার প্রভাববলয়ের বাইরে ঢাকার নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মনোভাব কেমন ছিল?

এই প্রসঙ্গসহ রবীন্দ্রজীবনের বিপুল চর্চিত-বিতর্কিত উভয় বিষয়ে নতুন ভাষ্য ও জবাবি ভাষ্য তৈরি হয়েছে ফরিদ আহমেদ-অভিজিৎ রায় আর কুলদা রায়-এম এম আর জালালের কলমে। গ্রন্থভুক্তির সময় সাথে যোগ করা হয়েছে পাঠকদের প্রতিক্রিয়াও। এই বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা।

‘স্যার জেমস জর্জ ফ্রেজারের গোল্ডেন বাউ’

বিশ শতকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ আর তার বিপরীতে বৈজ্ঞানিক মতবাদ নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করেছিলেন স্কটিশ নৃতাত্ত্বিক স্যার জেমস জর্জ ফ্রেজার। জাদুবিদ্যা, পৌরাণিক মতবাদের বিপরীতে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আর মানবসভ্যতার অগ্রগতির এক চিত্র তিনি এঁকেছিলেন আঠার শতকের শেষ ভাগে। বইটি প্রথম দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয় ১৮৯০ সালে। প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক খালেকুজ্জামান ইলিয়াসের প্রাঞ্জল অনুবাদে বিপিএল তা নিয়ে আসছে বাংলাভাষী পাঠকের জন্য।

‘বনে বেড়াই’

‘দেখুন বাংলাদেশ’, ‘দেখুন সুন্দরবন’ এবং ‘দেখুন সমুদ্র সৈকত’র পর দেশের উল্লেখযোগ্য সব বনে বেড়ানোর খবর নিয়ে মুস্তাফিজ মামুনের নতুন বই ‘বনে বেড়াই’। থাকছে আটটি বিভাগের ৩৬টি বন ভ্রমণের বিস্তারিত। প্রাণ-প্রকৃতি আর নির্জনতা প্রেমীদের জন্য এই বই। বিভাগওয়ারি তালিকা দেখে জানতে পারবেন কার বাড়ির কত কাছে, কোন বন। কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন- তার বিস্তারিত। আলোকচিত্রী হিসেবে নানা পুরস্কারজয়ী এই লেখকের নিজের তোলা দারুণ সব ছবিও রয়েছে বইটিতে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মোতাসিম বিল্লাহ পিন্টু।

প্রীতরেজা’র মুখোমুখি; আলোকচিত্রের ষোলো দিকপাল

বহতা জীবনের গল্প; সেই গল্প কখনও রঙিন, কখনও রঙহীন, ধূসর-বিবর্ণ। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত ঘুরে সেই বহতা জীবনের গল্প তুলে আনা সব ছবির আড়ালে হারিয়ে যায় আলোকচিত্রীদের নিজেদের গল্প। এটিএন নিউজের ডার্করুমে বসে প্রীত রেজার মুখোমুখি হয়ে নিজেদের গল্পের ঝাঁপি খুলেছেন বরেণ্য ১৬ ফটোগ্রাফার।

মেলায় দুই মন্ত্রী

বুধবার বিকালে মেলায় এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তারা বইমেলা ঘুরে দেখেন। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

নতুন বই

মেলার ২২তম দিনে ৮২টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ‌্যে রয়েছে অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত রাবেয়া খাতুনের ‘মুক্তিযুদ্ধের বাছাই গল্প’, হাতেখড়ি এনেছে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’, কোয়ান্টাম এনেছে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘ভাঙো দুর্দশার চক্র’, ঐতিহ্য এনেছে ড. সন্জীদা শাহরিয়ারের ‘মনোদৈহিক প্রভাব’, সৈয়দ আবিদ রিজভীর ‘মোগল সম্রাট শাহজাহান’, পাঞ্জেরী এনেছে আনিসুল হকের ‘আমার একটা পোষা দৈত্য আছে’, বইপত্র প্রকাশ করেছে মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের ‘রাজঘাট থেকে রাজপাড়া’ ইত্যাদি।

এদিন মেলায় শাহীনা খাতুনের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক স্মৃতিগ্রন্থ ‘প্রবাস জীবন, মুক্তিযুদ্ধ এবং আমি’ বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ছিলেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ।

জাম্বিয়া প্রবাসী শাহীনা খাতুন প্রবাস থেকে কীভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন, কীভাবে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এসব বৃত্তান্ত তিনি তুলে এনেছেন এই বইয়ে।

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বলেন, “বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা অধ্যায় রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে জানতে হলে বই পড়তে হবে, ইতিহাস জানতে হবে। বইটি সেক্ষেত্রে সাহায্য করবে।”

বইটি প্রকাশ করেছে সৈয়দ আবু তালেব মিয়া রিসার্চ সেন্টার।

মূল মঞ্চের আয়োজন

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি: বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক জিনাত হুদা অহিদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মো. আবুল কাসেম ও ড. শাহিনুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

অধ্যাপক জিনাত হুদা অহিদ বলেন, “শিক্ষা সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার একটি বাহন, সামাজিক সংহতি বিনির্মাণ ও সুরক্ষার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক দর্শন, বাঙালি জাতীয়তাবোধ, দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের আলোকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে আমূল পরিবর্তন করা প্রয়োজন।”

সভাপতির বক্তব্যে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপস্থিতি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রেক্ষিতে খুবই জরুরি।

“দেশের সামগ্রিক শিক্ষাকাঠামোয় জাতীয় মূল্যবোধ ও মননের ছাপ না থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি শিক্ষা-উন্নয়নের কোনো সূচক হতে পারে না। এদিকে খেয়াল রেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সকলের সচেতন ও সক্রিয় পদক্ষেপ প্রয়োজন।”