গান, কবিতা, নাটকের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা আয়োজনে মুখর ছিল রাজধানীর সাংস্কৃতিক অঙ্গন।
Published : 09 Dec 2016, 07:33 PM
শুক্রবার ছুটির দিনের সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন অংশ শুরু হয় এসব আয়োজন।
‘নিভৃতে কাজ করলেও ভালোবাসা ঠিকই পাওয়া যায়’
নীরবে-নিভৃতে কাজ করলেও পাঠককূলের ভালোবাসা ‘ঠিকই পাওয়া যায়’ বলে মনে করছেন সাহিত্যিক-সমালোচক ও শিক্ষক সৈয়দ আকরম হোসেন।
৭২তম জন্মদিনে ঐতিহ্য আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস থেকে আজ গভীরভাবে উচ্চারণ করছি, নিরাসক্তভাবে গোপনে, নিভৃতে কাজ করে গেলেও মানুষের ভালোবাসা ঠিকই পাওয়া যায়।”
শুক্রবার বিকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ছিল এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুর নাসের চৌধুরী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, সাংবাদিক আবেদ খান।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আকরমের পাঠদান রীতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “শিক্ষকতা জীবনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের প্রতি ছিল তার নিখাদ ভালোবাসা। বক্তৃতার অনবদ্য ভঙ্গির কারণে তিনি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা পেয়েছেন। শিক্ষার্থীদের হৃদয়ের কাছাকাছি যেতে হবে- এই বড় গুণটি শিক্ষক হিসেবে তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে।”
স্নাতকোত্তর পর্বে সৈয়দ আকরম হোসেনের ‘রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস: দেশ-কাল-শিল্পরূপ’ শিরোনামের গবেষণাকে সেকালের ‘শ্রেষ্ঠতম অভিসন্দর্ভ’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাশাপাশি সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম নিয়ে সৈয়দ আকরমের গবেষণা বাংলা সাহিত্যকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করছে বলে মনে করেন বাংলা একাডেমি সভাপতি।
তিনি বলেন, “লোকচক্ষুর আড়ালে থাকায় তার পক্ষে এত কাজ করা সম্ভব হয়েছে। তার সাহিত্য-সৃষ্টি বহুকাল স্থায়িত্ব লাভ করবে।”
সৈয়দ আকরমকে এক ‘জ্যোতির্ময়’ হিসেবে দেখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
তিনি বলেন, “সৈয়দ আকরম হোসেনের লেখায় এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তিনি অবজেক্টিভিটি ও সাবজেক্টিভিটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছেন। তার লেখায় প্রতিটি শব্দ ও বাক্য পেয়েছে নতুন অর্থ। তার কলমে ছিল পর্যবেক্ষণ শক্তি, এক দারুণ আভিজাত্য।”
“তার বলার স্বকীয়তায় আমরা তার প্রজ্ঞার পরিচয় পেয়েছি। তার শিল্পবোধের গভীরতা পাঠককে আরও আকৃষ্ট করবেই।”
সংবাদ প্রতিদিনের সম্পাদক আবেদ খান বলেন, “আমার এই বন্ধুটি প্রচণ্ড অভিমানী। মর্যাদা আর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে একেবারে অবিচল। অন্তুর্মুখী মানুষটির প্রতিবাদী ঋজু ভঙ্গিটি যখন প্রকাশ্য হয়, তখন তিনি পেয়ে যান অসংখ্য অনুরাগী।”
২০০১ সালে ‘রাজনৈতিক বিপর্যয়ের’ সময় বাংলা একাডেমিতে কর্মরত সৈয়দ আকরম হোসেনের কাঠিন্য, কর্মচাঞ্চল্যের নানা স্মৃতি তুলে ধরে আবেদ খান বলেন, “মোটা দাগের কাজ তিনি কখনও করেননি। বাইরে কঠিন মানুষটি ভেতরে ভীষণ কোমল। মানুষকে বশ করার এক অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তার মধ্যে।”
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে মোড়ক উন্মোচন হয় ‘জ্যোতির্ময়’ শিরোনামের একটি স্মারক গ্রন্থেরও, যেখানে সমকালীন সাহিত্যিকরা নানাভাবে আলোকপাত করেছেন সৈয়দ আকরম হোসেনকে।প্রকাশনা সংস্থা ধ্রুবপদ ও ঐতিহ্য-এর যৌথ প্রচেষ্টায় প্রকাশিত ৬০০ পৃষ্ঠার এই বইটির মূল্য ১১০০ টাকা। বইটি যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন অনু হোসেন ও সরকার আমিন।
শাহবাগে পথনাটক প্রদর্শনী
বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে শুরু হয়েছে পথনাটক প্রদর্শনীর মৌসুম।
আয়োজকরা জানান, পথনাটককে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী আয়োজন কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয় প্রদর্শনী। এদিন মঞ্চস্থ হয় প্রাচ্যনাটের ‘শ্বাসমূল’, লোকনাট্যদল (টিএসসি) ‘গুটিবাজ, অবয়ব নাট্যদলের ‘পুকুরচুরি, অপেরা নাটক দলের ‘বউ’ নাটকগুলো। বাংলাদেশে পথনাটক পরিষদের এই আয়োজনটি চলবে ১মে পর্যন্ত ।
আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস স্মরণ
আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজন করেছিল গণহত্যা বিষয়ক রচনা থেকে পাঠ, সঙ্গীত ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। শুক্রবার বিকেল ৪টায় জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠে এ আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি কবি স্থপতি রবিউল হুসাইন ও আক্কু চৌধুরী।
গণহত্যা বিষয়ক রচনা থেকে পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল ও তামান্না সারোয়ার নীপা। সংগীত পরিবেশন করে বধ্যভূমির সন্তানদল ও মিরপুর সাংস্কৃতিক একাডেমি। এরপর মোমবাতি প্রজ্বলনের পর জল্লাদখানা বধ্যভূমি নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘ফ্রোজেন টিয়ার্স প্রদর্শিত হয়।
‘গড়ে তুলি প্রতিরোধের দেয়াল’
নারীর প্রতি সহিংসতা - নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষিত হল নারীদের সাইকেল ও মোটরসাইকেল র্যালি থেকে।
নারীদের অনুপ্রেরণা দিতে ও তাদের সফলতার দিকে এগিয়ে নিতে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে র্যালিটি আয়োজন করে কালারস এফএম ১০১.৬।
সকাল সাড়ে ৭টায় মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে শুরু হয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলা মোটর, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এসে শেষ হয় এই র্যালি।
“নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সব স্তরের নারীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে কোনো না কোনো ভাবে। রাস্তাঘাটে, কর্মক্ষেত্রে, যানবাহনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে– প্রতিটা ক্ষেত্রেই নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।তারই প্রতিবাদে আজকের এই সাইকেল র্যালি।”
র্যালিটি শহীদ মিনারে পৌঁছানোর পর জেন্টলম্যান প্যান্টোমাইম ‘সারা এবং রাজ ঘোষ’ শিরোনামে একটি ছোট্ট মূকাভিনয় করে, যার মূল বক্তব্য ছিল নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা এবং নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান ও ভালবাসা জানানো।
বিশ্বব্যাপী এখন চলছে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের লক্ষ্যে ১৬ দিনের ক্যাম্পেইন ।এরই অনুপ্রেরণায় ২৫শে নভেম্বর ২০১৬ থেকে ১০ই ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত কালারস এফএম প্রচার করছে নানা ধরনের অনুষ্ঠান।
কবিগুরুর ভ্রমণের গানের সন্ধ্যা
‘রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ ও তার সঙ্গীত একটি চিত্তাকর্ষক বিষয়। ভ্রমণকালে রচিত তার গানগুলো আমাদের কাছে তার চিন্তা, কল্পনা ও সৃষ্টির গভীর পরিচয় তুলে ধরে- রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রমণকালীন সময়ের সাহিত্যচর্চা নিয়ে লিখেছিলেন এভাবেই।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই গানগুলো শোনার দারুণ এক আয়োজন করেছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চার প্রতিষ্ঠান উত্তরায়ণ।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠার সপ্তম বছরে পর্দাপনের শুভলগ্নে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে তারা আয়োজন করে গীতি আলেখ্য ‘চলার পথে’। গীতি-কাব্যের চমৎকার যুগলবন্দি পরিবেশনাটির পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন উত্তরায়ণের কর্ণধার লিলি ইসলাম।
সন্ধ্যার এ আয়োজনের শুরুতেই রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ-সঙ্গীতের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন লিলি ইসলাম। এর পর উত্তারায়ণের শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘বাজাও আমারে বাজাও’, ‘এ কি সত্য সকলি সত্য’ও ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃঞ্চায় হারিয়ে’। এরপর একক কণ্ঠে সাইফুল ইসলাম ‘সুনীল সাগরের শ্যামল কিনারে’ ও নাহিদা পারভীন ‘তোমার শেষের গানের’ গান দুইটি।
এরপর আবারও সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া হয় ‘যেতে যেতে একলা পথে’ ও ‘এই তো তোমার প্রেম ওগো’ গান। এরপর ‘পান্থ তুমি পান্থজনের সখা হে’ গানটি নুসরাত জাহান সাথী ও ‘ক্ষত যত ক্ষতি তত’ গেয়ে শোনান কুশল রায় ও অদিতি রায়। এরপর সম্মেলক কণ্ঠে ছিলো ‘সুখের মাঝে তোমায় দেখেছি’, ‘ভুবন জোড়া আসন খালি’ ও ‘নয় নয় মধুর খেলা। আশিকুর রহমান ‘সে কোন পাগল যায় পথে গো’ ও সীমু দে’র কণ্ঠে শোনা যায় ‘সখি প্রতিদিন হায়’। এর পর সম্মেলক কণ্ঠে ‘হেরিয়া শ্যামল ঘননীল গগণে’ গানের পর লিলি ইসলামের কণ্ঠে শোনা যায় ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’। সম্মেলক কণ্ঠে ‘ক্ষর বায় বয় বেগে’ ও ‘ও আমার দেশের মাটি’ গান দুইটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ আয়োজন।