রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী ঢলে সীমান্তে নতুন সঙ্কট তৈরির প্রেক্ষাপটে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে উদ্বেগ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
Published : 23 Nov 2016, 04:02 PM
কক্সবাজারে ‘দালাল’সহ ৭০ রোহিঙ্গা আটক
সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কাজ করবে বিজিপি
সেনা অভিযানের সময় নির্বিচারে হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের যে দাবি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানিয়েছে, তাতে সাড়া দিতেও মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সরকারের ডাকে রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থান বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে অতিরিক্ত সচিব (দ্বিপক্ষীয় ও কনস্যুলার) কামরুল আহসানের সঙ্গে দেখা করেন।
কামরুল আহসান পরে সাংবাদিকদের বলেন, যে পরিস্থিতি চলছে তা নিয়ে ‘বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা’ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের শরণার্থীরা যাতে ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় সেদেশের নয় সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর আশপাশের এলাকাগুলোয় ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত জেলাগুলোয় শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইন প্রদেশে ১২শ’র বেশি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ সহিংসতায় ৮৬ জনের মৃত্যুর খবর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করলেও নিহতদের মধ্যে ৬৯ জনকে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে দাবি করেছে তারা। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
এদিকে দমন অভিযানের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এ প্রেক্ষাপটে সীমান্তে বাড়তি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
গত কয়েক দিনে কয়েকশ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এ বিষয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে।
তিন দশক ধরে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহনকারী বাংলাদেশ সরকার নতুন করে শরণার্থী নিতে নারাজ। বারবার আহ্বান সত্ত্বেও আগের শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো উদ্যোগও নিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট থেকে উদ্ভূত এই শরণার্থী সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।
মিয়ানমারে মানবিক সঙ্কট তৈরি হওয়ায় রাখাইনের মানুষ যে নিরাপত্তা আর আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, সে বিষয়টিও তিনি রাষ্ট্রদূতের সামনে তুলে ধরেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, অনুপ্রবেশ বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের আন্তরিক চেষ্টার পরও নারী-শিশুসহ বিপদগ্রস্থ হাজারো মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে আসছে। আরও বহু মানুষ সীমান্তের ওপারে জড়ো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
অতিরিক্ত সচিব কামরুল আহসান অনুপ্রবেশ বন্ধে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমে তাদের দেশের ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশকে জড়ানোর চেষ্টারও প্রতিবাদ জানান তিনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, “রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের সময় নির্বিচারে হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের যে দাবি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানিয়েছে, তাতে সাড়া দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কামরুল আহসান।
“রাখাইনের সংখ্যালঘু মুসলমানদের যাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করা না হয়, তা নিশ্চিতের জন্য দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নিতেও মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।”
সেই সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দ্রুত উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত সচিব, যাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের নাগরিকরা নির্ভয়ে, নিরাপদে এবং আত্মসম্মানের সঙ্গে নিজেদের গ্রামে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।