নথি ‘গায়েব হয়ে যাওয়ায়’ রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের ‘অবৈধ কিছু’ প্লটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কথা সংসদীয় কমিটির কাছে স্বীকার করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউক।
Published : 26 Oct 2016, 08:45 PM
বুধবার সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে কোন কোন প্লটের নথি গায়েব হয়েছে, তার তালিকা কমিটির কাছে আসেনি।
রাজউকের বিভিন্ন অনিয়ম ও অডিট আপত্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে সংসদীয় কমিটির এই বৈঠকে।
কমিটির সভাপতি শওকত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফাইল যে পাওয়া যায় না, সেটা রাজউক স্বীকার করেছে। এছাড়া নকশা অনুমোদনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জনগণ রাজউকে গেলে যে হয়রানি শিকার হয়, রাজউক তা স্বীকার করেছে।”
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কার্যালয় থেকে শতাধিক বহুতল ভবনের নকশা হারিয়ে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসে।
বণিকবার্তার এক প্রতিবেদনে সে সময় বলা হয়, এসব ভবনের অধিকাংশই ছয়তলার অনুমোদন নিয়ে নয়তলা বা তারও বেশি উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়েছে। এ জালিয়াতির তথ্য গোপন করতেই ‘অনুমোদনপ্রাপ্ত ভবন মালিকদের যোগসাজশে রাজউকের একশ্রেণীর কর্মকর্তা’ নকশা অনুমোদনের নথি গায়েব করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজউকের কাছে সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোর নথি চাইলেও ‘গায়েব হয়ে যাওয়ায়’ তা দিতে ব্যর্থ হয় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাটি। আরও কয়েকটি পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সে সময়।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠকে ফাইল গায়েব হওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে গুলশান এলাকার অবৈধ প্লট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ফাইল না থাকায় সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না বলে রাজউক জানিয়েছে।”
২০১১ সালে সংসদে এক প্রশ্নের জবাবেও তৎকালীন গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান রাজউকের নথি গায়েবের কথা স্বীকার করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, রাজউকের নথি হারানো রোধ করতে সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে নথি সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে গুলশান-বনানী-বারিধারার তিন হাজার ৮৪৮টি নথির সাত লাখ ৭৭ হাজার ৭৩ পৃষ্ঠার সংরক্ষণ কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়া উত্তরা, পূর্বাচলসহ অন্যান্য আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার এবং নকশা অনুমোদন ও অন্যান্য শাখার ১৮ হাজার নথির ১৮ লাখ পৃষ্ঠা ডিজিটাল আকারে সংরক্ষণ করার কাজ চলার কথা সে সময় জানিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি শওকত আলী বলেন, “কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজউকের সর্বাঙ্গীন উন্নয়ন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির নতুন চেয়ারম্যানও এ ব্যাপারে আগ্রহী বলে কমিটির কাছে মনে হয়েছে।”
রাজউক চেয়ারম্যান এম. বজলুল করিম চৌধুরী বৈঠকে ছিলেন। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য জানতে একাধ্বিার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
অডিট আপত্তি সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা
সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, এক হাজার ৬২৬টি অডিট আপত্তি উঠেছে রাজউকের; যার মধ্যে ৫৯৭টির নিষ্পত্তি হয়েছে। গত পাঁচ বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র আটটি অডিট আপত্তির।
ওই এক হাজার ৬২৬টি অডিট আপত্তির সঙ্গে জড়িত অর্থের পরিমাণ আট হাজার ৫২৫ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
কমিটির সভাপতি সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেন, “রাজউকের অডিট আপত্তি বেড়েই চলছে, কিন্তু নিষ্পত্তি নেই। কমিটি দ্রুত এসব আপত্তি নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়েছে।”
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভবিষ্যতে যাতে অডিট আপত্তি না আসে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও সচেতন হওয়া এবং মন্ত্রণালয়ের আপত্তিগুলো আর্থিক ক্ষমতা অনুযায়ী অবলোপন করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে।
পাশাপাশি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অডিট আপত্তিগুলো দ্বিপক্ষীয় বা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
শওকত আলীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, হাবিবর রহমান, আবদুর রউফ ও নাভানা আক্তার অংশ নেন।