ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অঙ্কন-চিত্রায়ন এবং কারুশিল্প বিভাগের সাবেক ও বর্তমান তিন শিক্ষার্থীর আঁকা এমনই সব ছবি নিয়ে অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে চলছে ভিন্ন ধারার দুই প্রদর্শনী ‘পরম্পরা’ ও ‘ভার্সেটালিটি অফ ক্রাফট’।
‘পরম্পরা’ শিরোনামের প্রদর্শনীটি চলছে জয়নুল গ্যালারি-১ এ, শ্রীবাক বসাক ও তার মেয়ে উর্মিলা শুক্লার আঁকা ছবি ঠাঁই পেয়েছে সেখানে।
পরম্পরা
টাঙ্গাইলের সাধারণ এক পরিবার থেকে উঠে আসা শিল্পী শ্রীবাক বসাক আঁকাআঁকি জগতে গুরু হিসেবে পেয়েছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পটুয়া কামরুল হাসানকে।জলরং মাধ্যমে সাদা কাগজে মোটা তুলির ড্রয়িং, কাঁদামাটির মোটিফে নকশাপ্রধান কাজেই তার ঝোঁক।
‘পরম্পরা’ প্রদর্শনীতে শ্রীবাক বসাক আশ্রয় নিয়েছেন লোকজ মোটিফের; অন্য কথায় বলা যায় বাউল ভাবাদর্শে তিনি ক্যানভাসে লালনকেই বিমূর্ত করতে চেয়েছেন। ‘কোথায় পাবো তারে’, ‘মনের মানুষ’, ‘অচিন পাখি’ শিরোনামের ছবিগুলোতে শিল্পী তুলে ধরেছেন লালনের ঈশ্বরসাধন, মানবধর্মের কথা।
যাপিত জীবনের কথা বলতে গিয়ে ‘রঙ্গমঞ্চ’ শিরোনামের সিরিজ ছবিতে তিনি এঁকেছেন মুখাবয়বের নানা ভঙ্গি; কখনো সে মুখে ক্রুড়তার বক্র হাসি, কখনও বিষণ্ন সময়ের বিমর্ষ অবয়ব। কখনো দেখা যায় আঁধার কেটে উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হয় সেই মুখগুলো।
শিল্পী প্রেমের কথা বলেছেন ‘প্রেমবিলাসে’; ‘লীলাবালি’, ‘সখী’ ছবিতে তিনি এঁকেছেন গ্রামবাংলার নারীর গল্প। ‘মাঙ্গলিক সংস্কৃতি’, ‘ঐতিহ্য’ শিরোনামের ছবিতে তিনি এঁকেছেন বাংলার আবহমানের লোকজ ঐতিহ্যের কথা।
রংয়ে-রেখায় নানা দৃশ্যকল্প নির্মাণ কিংবা পুরনো ম্যাগাজিন কাটাকুটি করে কোলাজ বানাতে ভীষণ পছন্দ করেন শিল্পী উর্মিলা শুক্লা। তাঁতের কাপড় তিনি বুনেছেন শুকনো পাতাকে। শিল্পচর্চায় বুননের এই ধারাটি সচরাচর দেখাও যায় না।
উর্মিলা বলেন, “ব্যক্তিজীবনে আমি তাঁতের কাপড়ে পোশাক পরিচ্ছদের নকশা করি। শিল্পকে নানা ব্যবহারিক মাধ্যমে আনতে এবার তাই একটু নিরীক্ষা করলাম।”
উর্মিলার ছবির শিরোনাম ‘পত্রাঞ্জলি’, সিরিজে ঠাঁই পেয়েছে নয়টি ছবি।
গত সোমবার শুরু হওয়া এই প্রদর্শনীটি ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে।
ভার্সেটালিটি অফ ক্রাফট
আধুনিক শিল্পের চাপে ক্রমেই হারাতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প। সেই কারুশিল্প নিয়ে নিরীক্ষায় নেমেছেন চারুকলা অনুষদের কারুশিল্প বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী জয়দেব বিশ্বাস।
কারুকার্যখচিত সৃষ্টিকর্মে জয়দেবের সৃজনশীল ভাবনার পাশাপাশি নান্দনিকতার প্রকাশ। স্ক্রিন প্রিন্টিং, কাঠ কেটে, মেটালকে পিটিয়ে নানারকমভাবে অবয়ব তৈরি করেছেন তিনি। প্রতিদিনের দেখা এই অবয়ব কোনোটি বিমূর্ত, কোনোটি প্রতীকী আবার কোনোটিতে বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে। নির্মাণ-কৌশল বা অলঙ্করণ বিচারে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের উৎসমূল উদঘাটনেও ব্রতী হয়েছেন তিনি।
প্রদর্শনীতে জয়দেবের একাডেমিক কাজ উপস্থাপিত হলেও এখানে তার ব্যক্তিগত অনুভূতিও নিজস্ব একটি গতিপথ পেয়েছে। শিল্পকর্মে তিনি সংযুক্ত করেছেন ধর্মীয় বিশ্বাসকে। মনোগ্রাহী টেক্সচারের ব্যবহারে মানুষ, মুখোশ, সাপ, মাছ ও ধর্মীয় বিশ্বাসজাত ফর্মের উপস্থাপনার দেখা মিলবে এখানে এসে। বিন্দু আর রেখার টেক্সচারে অ্যাপ্লিক ও ট্র্যাপেস্ট্রি মাধ্যমে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন লোকজ মোটিফ।
ভার্সেটালিটি অফ ক্রাফট প্রদর্শনী গত সোমবার শুরু হয়েছে। প্রদর্শনীটি আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।