স্মার্টকার্ড যুগে পদার্পণ করা বাংলাদেশে নাগরিকদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 02 Oct 2016, 02:49 PM
রোববার স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে তিনি বলেন, “আমি নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করব, যত ডাটা নেওয়া হচ্ছে,তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্তভাবে প্রয়োজন।”
এই স্মার্টকার্ড নেওয়ার সময় পুরনো লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত দিতে হবে। দিতে হবে ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি। দশ ডিজিটের এই কার্ডে সংযুক্ত চিপে নাগরিকদের ৩১টি তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
স্মার্টকার্ড যাতে জালিয়াতি না হয়, সেজন্য সচেতন থাকার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যত ধরনের নিরাপত্তা দরকার… কোনোভাবেই যেন কেউ এর অপব্যবহার করতে না পারে।”
সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়েই প্রধানমন্ত্রী আইরিশের প্রতিচ্ছবি এবং দশ আঙ্গুলের ছাপ দেন। পরে পুরনো ভোটার আইডি কার্ডটি ফোরত দেন তিনি। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তার স্মার্টকার্ডটি তুলে দেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্মার্টকার্ডটি তাকে হস্তান্তর করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যদের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সকলকে এই পরিচয়পত্র দেওয়া সম্ভব হলে সরকারি সেবাপ্রাপ্তিতে দেশে একটা আমূল পরিবর্তন আসবে।”
এর ফলে প্রতারণা ও জালিয়াতি কমে আসবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “অপরাধ করলে কেউ আর পার পাবে না।”
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এই ডেটাবেইস ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “পাসপোর্টে তৈরিতে এই সুবিধা ব্যবহার করতে পারছে এবং ব্যাংকে অর্থ লেনদেনে গ্রাহকদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে।”
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তব’
২০০৬ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার জন্য আওয়ামী লীগের দাবির কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরাই দাবি করেছিলাম ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করার। যদিও সে দাবি উপেক্ষিত হয়। কিন্তু এটা প্রমাণ হয়েছিল, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাদের ক্ষমতার সময়ে যে ভোটার তালিকা করে, তাতে এক কোটি ৩৯ লাখ ভুয়া ভোটার যুক্ত ছিল।”
পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করে নাগরিকদের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হয়।
এই পরিচয়পত্রের ব্যবহার কেবল ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নাগরিক সেবার ক্ষেত্রেও যাতে কাজে লাগানো যায়, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সেই কাজে হাত দেয় বলে জানান শেখ হাসিনা।
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি, আজ যে স্মার্টকার্ড আমরা প্রদান করলাম, আমাদের সে অঙ্গীকারই আমরা রক্ষা করলাম। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে বাস্তব। সেটাই প্রমাণিত হল।”
সরকারের জঙ্গিবিরোধী অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কোনোভাবেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না।
“যারা এ ধরনের সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকবে, তাদের সনাক্ত করতে এই কার্ড যথেষ্ট সহযোগিতা করবে।”
স্মার্টকার্ড থাকলে যে কোনো অপরাধীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা বা সনাক্ত করা সহজ হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং মানসিক প্রতিবন্ধীদেরও এই নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “কারাগারে বন্দিদেরও পরিচয়পত্র দেওয়া দরকার।”
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে যারা ভোট দিতে পারে, অর্থাৎ ১৮ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী, তাদেরই পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। তবে যাদের বয়স ১৮ বছরের কম, যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়নি, তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।