ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার মারা যান সব্যসাচী লেখক সৈয়দ হক। তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর তসলিমা তার ফেইসবুক পাতায় একটি স্ট্যাটাসে ‘ক’ নিয়ে লেখেন।
তসলিমা লিখেছেন- “এখন যে জরুরি বিষয়টি আমি জানতে ইচ্ছুক সেটি হল, তিনি (সৈয়দ হক) যে ঢাকা হাই কোর্টকে দিয়ে ‘ক’ বইটিকে নিষিদ্ধ করিয়েছিলেন, সেটির কী হবে? ১২ বছর পার হয়ে গেছে, এখনও কি বইটি নিষিদ্ধ রয়ে যাবে? নাকি বাদীর অনুপস্থিতিতে বইটি এখন মুক্তির স্বাদ পেতে পারে! ”
২০০৩ সালে তসলিমা নাসরিনের ‘ক’ গ্রন্থটি প্রকাশের পর তা নিয়ে সমালোচনা ওঠে। বইটিতে তসলিমা তার ব্যক্তিজীবনের ঘটনাগুলো খুব খোলামেলাভাবে প্রকাশ করেন। সেখানে সৈয়দ হকসহ কয়েকজনকে জড়িয়ে কিছু কথা লেখেন তিনি, যা নিয়ে বিতর্ক ওঠে।
এরপর সৈয়দ হক তসলিমার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন। তার আবেদনে আদালত বইটি নিষিদ্ধ করে।
ফেইসবুকে তসলিমা লিখেছেন- “এই মামলাই বা কী অবস্থায় আছে কে জানে। এটির কোনও শুনানি হয়েছে বলে শুনিনি। তিনি (সৈয়দ হক) কি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে গেছেন কাউকে? যদি দিয়ে থাকেন, তাহলে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি কি মামলা চালিয়ে যাবেন এবং বইটি নিষিদ্ধ রাখার ব্যবস্থা করবেন?”
সাহিত্যের সব অঙ্গনে সদর্প বিচরণকারী সৈয়দ হকের সফলতার দিকটি তুলে ধরে তার সঙ্গে নিজের ‘ভালো-মন্দ’ সম্পর্কের কথাও ফেইসবুকে লিখেছেন তসলিমা।
“একজন লেখকের যা যা কাঙ্ক্ষিত থাকতে পারে, তা পাওয়া হয়ে গেলে তাকে সফল বা সার্থক লেখকই বলা যায়। সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে আটের দশকের শেষদিকে ভালো যোগাযোগ ছিল আমার। মাঝে মধ্যে ময়মনসিংহে গেলে আমার সঙ্গে দেখা করতেন। একবার আমার সাহিত্য সংগঠন ‘সকাল কবিতা পরিষদ’-এর অনুষ্ঠানে তাকে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। তিনি গিয়েছিলেন। ভালো বক্তৃতা করেছিলেন।”
“সেসময় আমার সাহিত্যচর্চার বেশ খবর নিতেন তিনি। আমার লেখা কবিতাগুলো মন দিয়ে পড়তেন, মন্তব্য করতেন। তিরিশ বছরের বড় ছিলেন, আমাকে কন্যার মতো স্নেহ করেন বলতেন।”
“একসময় যোগাযোগ সম্পূর্ণই বন্ধ করে দিই। সে অনেক গল্প। ’ক’ বইটিতে সেইসব ভালো-মন্দের স্মৃতি অনেকটাই আছে।”
মৌলবাদীদের হুমকিতে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর তসলিমা কয়েক দেশ ঘুরে এখন ভারতে থাকছেন।