সোমবার বিকালে বাংলা একাডেমির মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে সাহিত্য বিষয়ক একটি বক্তৃতা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, “আধুনিক বাংলা কবিতায় কাদরী যে স্বতন্ত্র ও সম্ভ্রান্ত রুচির পরিচয় দিয়েছেন তা বিস্ময়কর।
“আধুনিক মানুষের জীবনের নৈঃসঙ্গ চেতনা, অনিকেতবোধকে তিনি সাম্প্রতিক শিল্প রীতিতে কবিতা কলার বিষয় করে নিয়েছিলেন।”
মূল বক্তৃতা অনুষ্ঠান শুরুর আগে ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘শহীদ কাদরীর জন্য শোকগাঁথা’ শিরোনামে একটি শোকসভার আয়োজন করা হয়।
এতে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ প্রবাস-জীবনের শেষ দিকে শহীদ কাদরীর কবিতায় বারবার উচ্চারিত হয়েছে প্রিয় স্বদেশের জন্য তার আকুল হাহাকার।”
শহীদ কাদরীর কবিতা নিয়ে মূল্যায়নমূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. অনু হোসেন।
তিনি বলেন, “শহীদ কাদরী ছিলেন আদ্যপান্ত নাগরিক কবি। কবিতা নির্মাণের প্রকরণে পশ্চিমা শিল্পরীতির আশ্রয় গ্রহণ করলেও বিষয় নির্বাচনে তিনি সবসময়ই ছিলেন বাংলার মানুষ ও নিসর্গের প্রতি ভালোবাসায় ব্যাকুল।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিয়োগান্তক হত্যাকাণ্ড বিষয়ে রচিত শহীদ কাদরীর কবিতা ‘হন্তারকদের প্রতি’ পাঠ করেন রামেন্দু মজুমদার। একই কবিতার ইংরেজি ভাষ্য পাঠ করেন ড. সোনিয়া নিশাত আমিন।
শোকসভা শেষে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জানান, বুধবার শহীদ কাদরীর মরদেহ সর্বপ্রথম বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে।
‘সোনার বাংলা অ্যান্ড দ্য এস্টাব্লিশড ফ্রন্টেইনার: কলোনিয়াল হিস্ট্রি অ্যান্ড লিগেসি অফ দ্য পার্টিশন’ শীর্ষক ওই একক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়।
ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট অব দ্য ন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাট সিভিলাইজেশন (ইনালকো)-এর শিক্ষক এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক জেরেমি কড্রন শোকসভা শেষে এই একক বক্তৃতা প্রদান করেন।
ফরাসি গবেষক জেরেমিক কড্রন তার বক্তৃতায় বলেন, “সোনার বাংলা ধারণাটি উন্মূল কিংবা হঠাৎ আবেগপ্রসূত ধারণা- মাত্র নয়। বাংলার বিস্তৃত ইতিহাসে এর গভীর প্রেক্ষাপট নিহিত আছে।
“উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প, জাতীয়তাবাদী অভিঘাত এবং মানুষের মুক্তির আন্দোলনে যে ভাবগত পাটাতন নির্মিতি পেয়েছে তার ভেতর স্বতন্ত্র স্বাধীন ভূখণ্ড প্রাপ্তির প্রত্যাশায় বাঙালিরা নানা মাধ্যমে তাদের আকুতি ব্যক্ত করেছে।”
একক বক্তৃতায় এই গবেষক বলেন, “সোনার বাংলার আকাঙ্ক্ষাটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কোনো প্রকল্প ছিল না। বরং একই সঙ্গে বাঙালি লেখক- বুদ্ধিজীবীরা তাদের চিন্তায় ও তৎপরতায় এই অভীপ্সা ব্যক্ত করে গেছেন।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের বিষয়টি উঠে এসেছে তার প্রবন্ধে।
তিনি বলেন, “সেদিন তার কালজয়ী ভাষণটি বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারণাকে বৃহৎ অবয়ব প্রদান করেছে।”
কবি শামসুর রাহমানের ‘ভক্ত’ জেরেমিক কড্রন কবির ‘স্বাধীনতা’ কবিতার কথা উল্লেখ করে বলেন, “কবিতায় এমন এক রাজনৈতিক স্বপ্নভূমির কথা উচ্চারিত হয়েছে, যা শত শহীদের রক্তে রঞ্জিত এক অনন্য সোনার বাংলারই প্রতিচ্ছবি।”