রাস্তা খুঁড়তে ৬ মাস আগে অনুমতি নিতে হবে: আনিসুল

রাজধানীতে খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগ নিরসনে রাস্তা কাটতে ছয় মাস আগে সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন  ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2016, 03:48 PM
Updated : 24 August 2016, 03:48 PM

বুধবার গুলশানে উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন কার্যালয়ে ২৬টি সংস্থার প্রধানদের নিয়ে আয়োজিত সমন্বয় সভায় একথা বলেন তিনি।

আনিসুল হক বলেন, “রাস্তা খোঁড়ার ক্ষেত্রে সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকলে জনগণের দুর্ভোগ বাড়বে। আর তা হলে সংস্থাগুলোর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের বনিবনা হবে না।

“আগামী ২-৩ বছরে আমরা ৪৯৭ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করব। আর ওয়াসা দেড় হাজার কিলোমিটার সড়ক কেটে তাদের পাইপলাইন বসাবে। এ কাজে যেন নাগরিক দুর্ভোগ না হয় সেজন্য সমন্বয় খুব দরকার।”

উন্নয়ন কাজে সমন্বয়হীনতা ঢাকা শহরে সবচেয়ে বড় সমস্যা মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সমন্বিত উন্নয়ন কাজ না করলে আপনাদের সঙ্গে আমাদের বনিবনা হবে না। সেটা কারো জন্যই ভালো না।”

সভায় রাজউক, গণপূর্ত অধিদপ্তর, পুলিশ, বিআরটিএসহ ২৬টি সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি সেবা সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে গত ২৭ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্র জারির পর উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম সমন্বয় সভা ছিল এটি।

এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সেবা সংস্থা উন্নয়ন কাজের জন্য সড়ক খোঁড়ার অনুমতি চাইলে তা দেওয়া হয়। কিন্তু সড়ক খোঁড়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা মেনে চলতে পারে না সংস্থাগুলো। ফলে জনসাধারণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

“নিয়ম অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের অনুমতি পাওয়ার পর রাস্তা খোঁড়ার কাজ করার কথা থাকলেও অনেক সংস্থা তা মানে না। অনেকে করপোরেশনকে না জানিয়েই রাস্তা কেটে ফেলে।

“দুর্ভাগ্যজনক হলো- অনেকে রাতের আঁধারে রাস্তা কেটে কাজ করে চলে যায়। গর্তও ভরাট করে না।”

এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, “রাতে রাস্তা কেটে চলে যায়। সকালে গিয়ে দেখা যায় রাস্তা কাটা। তখন জনগণের খুব কষ্ট হয়।”

সড়ক কাটার আগে ট্রাফিক বিভাগকে এ বিষয়ে জানানোর অনুরোধ করেন ওই কর্মকর্তা।

বনানী লেভেল ক্রসিং থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন মেয়র আনিসুল।

এ কারণে ওই সড়কে সড়ক বাতি স্থাপন, পরিচ্ছন্নতা, নিষ্কাশন ও বিলবোর্ড উচ্ছেদের কাজ করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিকে উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, “সারাদেশের সড়ক আপনাদের। ঢাকার সব সড়কও আপনারা বানিয়ে আমাদের হাতে হস্তান্তর করেছেন। এয়ারপোর্ট সড়কের পরের অংশও আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ওই অংশটুকু দিতে সমস্যা কোথায়?”

জবাবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, সেখানে কিছু ‘বিউটিফিকেশন’, ১০টি বাস-বে নির্মাণে একটি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। এছাড়া বিলবোর্ড ভাড়া দেওয়ারও প্রক্রিয়া চলছে। এজন্য সড়কটি বুঝিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এ সময় মেয়র বলেন, “সিটি আমার, আমি মেয়র আর কোনো উন্নয়ন প্রকল্প হলে আমি জানব না, তা হতে পারে না। সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া কোনো বিলবোর্ড বসাতে পারবেন না। আইনে নেই।”

এ সময় নতুন করে কোনো বিলবোর্ড স্থাপন বা বিজ্ঞাপনের অনুমতি না দিতে সরকারি সংস্থার প্রধানদের অনুরোধ করেন মেয়র।

সব সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে আনিসুল হক বলেন, “আমরা কোনো সংস্থার উন্নয়নের বাধা নই। আমরা চাই সবার ভালো হোক। কিন্তু এজন্য সবার মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি।”

সভায় যানজট নিরসন, সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা, জলাবদ্ধতা দূর করা, বর্জ্য অপসারণসহ ২৫টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আগামী ১ মাসের মধ্যে যানজট নিরসন ও ফুটপাত হকার ও অবৈধ দখলমুক্ত করতে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।