মীর কাসেমপুত্র না ফিরলেও শুনানি করবেন খোন্দকার মাহবুব

যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ছেলের সন্ধান পাওয়া না গেলেও এই যুদ্ধাপরাধীর দায়ের করা মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনে আগামী রোববার শুনানি করবেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2016, 02:05 PM
Updated : 24 August 2016, 05:13 PM

কাসেমপুত্র আহমেদ বিন কাসেম আরমান নিখোঁজ থাকায় প্রস্তুতি নিতে পারেননি জানিয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদনের শুনানি মুলতবি চেয়েছিলেন খন্দকার মাহবুব।

বুধবার শুনানি শুরুর পর তার আবেদনে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তা রোববার পর্যন্ত মুলতবি করেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আরমান তার বাবার মামলা পরিচালনায় যুক্ত। তাকে সম্প্রতি ডিবি পরিচয়ে আটক করা হয়েছে বলে পরিবারের দাবি, তবে পুলিশ তা অস্বীকার করেছে। 

বুধবার শুনানির পর খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলায় তার সহযোগী হিসাবে ব্যারিস্টার আরমানের কাছে নথি-পত্র ছিল।

“উনি আমাকে তৈরি করে দিতেন। আমি তার সহায়তা নিয়ে আদালতে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করতাম।”

‘সাদা পোশাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী’ আরমানকে তুলে নেওয়ার পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না জানিয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, “আমি আশা করেছিলাম, হয়ত পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেবে। তখন আমি তার সাথে যোগাযোগ করতে পারব।

“কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ না হওয়ার কারণে আমার পক্ষে আজকে মামলার যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই মর্মে আমরা আদালতে সময় চেয়েছিলাম।”

আগে একবার সময় দেওয়ার পর এখন আর সময় আসামি পক্ষকে দেয়নি আদালত।

“তখন আমি বললাম, এই অবস্থায় আমার এই মামলা থেকে অব্যাহতি চাওয়া ছাড়া অন্য কোনো গত্যান্তর থাকবে না। তখন আদালত বললেন, আপনি আজ শুরু করেন। আমরা আগামী রোববার পূর্ণাঙ্গভাব শুনব। এরপর আমি শুনানি শুরু করেছি।”

রোববারের মধ‌্যে আরমানকে পাওয়ার আশা জানিয়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, “নতুবা যে অবস্থায় আছে, আমি মামলাটা করেছি, কিছু কিছু আমার জানা আছে, আমি আমার স্মৃতি শক্তি দিয়েই আগামী রোববার মামলাটির যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করব।”

তবে মীর কাসেমের ছেলে হিসেব নয়, আইনজীবী হিসেবে আরমানের বিষয়ে আদালতের কোনো বক্তব‌্য আশা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খোন্দকার মাহবুব। 

“এ ধরনের একটা ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে, অথচ আদালত এই বিষয়ে নিশ্চুপ। প্রসিকিউশন থেকেও এটাকে হাসি-তামাশা করে উড়িয়ে দিচ্ছে, যা আমার কাছে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মনে হয়েছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আরমান নিখোঁজের পর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। 

“সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এ ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছেন, তারপরও এই ব্যাপারে সরকার নিশ্চুপ। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তা থেকে প্রমাণ হয়, সাধারণ মানুষের তো কোনো নিরাপত্তা নাই, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদেরও জানমালের নিরাপত্তা নাই।”

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস‌্য এবং দলটির অর্থ জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমকে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেয়।

এরপর গত ৮ মার্চ তার আপিলের রায়েও ওই সাজা বহাল থাকে। ৬ জুন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন‌্য ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম।

রিভিউ আবেদন গত ২৫ জুলাই আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসার পর মীর কাসেমের আইনজীবীদের সময়ের আবেদনে শুনানি এক মাস পিছিয়ে যায়।

রিভিউ খারিজ হলে এবং তিনি প্রাণভিক্ষা না চাইলে কিংবা আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হলে কাশিমপুর কারাগারে থাকা মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না।

দণ্ড মওকুফ চেয়ে ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি তুলে ধরেছেন মীর কাসেমের আইনজীবীরা।

খন্দকার মাহবুব বলেন, “একটা কথা আমি আদালতকে বলেছি, এই মামলার যে সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে, সেই সাক্ষ্য প্রমাণে ৭ অভিযোগের মধ্যে একটিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

“যে অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেটা যদি স্বীকারও করা হয়, তাহলে পরিস্থিতির কারণে যে সাক্ষ্য প্রমাণ আছে, সেটা প্রমাণ হয় না। এ কারণে কোনো অবস্থায় তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে না। এটার ওপরই আমি বেশি জোর দিব।”