ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঁচ সদস্যের বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
Published : 20 Jul 2016, 02:35 PM
ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এস এম জিয়াউর রহমান বুধবার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৪ অগাস্ট দিন ঠিক করে দেন।
এ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাউদ্দিন হাওলাদার জানান, কারাগারে থাকা তিন আসামিকে এদিন অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আদালতে হাজির করা হয়। বাকি দজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
আসামির মধ্যে জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম ওরফে মুশফিক ওরফে এরফান, সাইফুল ইসলাম ওরফে মানসুর আদালতের কাছে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সুবিচার প্রার্থনা করেন।
পলাতক দুই আসামি জুনেদ ওরফে জুনায়েদ আহমেদ ওরফে তাহের এবং আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আব্দুল্লাহর পক্ষে মামলা লড়তে আদালতের আদেশে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে বলেও সালাউদ্দিন হাওলাদার জানান।
গতবছর ৩০ মার্চ ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিজের বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে খুন হন ওয়াশিকুর, যিনি ফেইসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লিখতেন।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বেগুনবাড়িতে এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই জনতা ধাওয়া করে মাদ্রাসাছাত্র জিকরুল্লাহ ও আরিফুলকে ধরে ফেলে। আর সাইফুলকে হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগেই ধারালো অস্ত্রসহ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সাইফুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
ঘটনার পরদিন চার জনকে আসামি করে তেঁজগাও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন নিহতের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে।
এরপর গতবছর ২ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ আনসারুল্লাহর পাঁচ সদস্যকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, পলাতক আসামি আব্দুল্লাহ হত্যার পুরো বিষয়টি পরিকল্পনা করেছিলেন এবং বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছিলেন।
অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা প্রমাণে মোট ৪০ জন সাক্ষী করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এর আগে ২০০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে লেখালেখিতে সক্রিয় আহমেদ রাজীব হায়দারকে খুন করা হয় একই কায়দায়। গতবছর ৩১ ডিসেম্বর ওই মামলার রায়ে দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত।
রাজীব হত্যার পর আরও অন্তত ছয়জন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক, প্রকাশক একই কায়দায় খুন হলেও তাদের মধ্যে কেবল বাবু হত্যা মামলাই তদন্ত শেষে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে গেল।
২৭ বছর বয়সী ওয়াশিকুর তেজগাঁও কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে মতিঝিলের ফারইস্ট এভিয়েশন নামের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন। তার বাবার নাম টিপু সুলতান, বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামে।
সামহোয়্যারইন ব্লগে ‘বোকা মানব’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থাকলেও তিনি মূলত লেখালেখি করতেন ফেইসবুকের কয়েকটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।