‘বিপথগামীদের কাছে পরাস্ত হতে পারে না বাংলাদেশ’

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ধর্মের নামে উগ্রপন্থা রুখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের বত্রিশ ব্যক্তিত্ব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2016, 06:42 PM
Updated : 31 July 2016, 07:31 PM

আলোচিত দুই সন্ত্রাসী হামলা ও ‘নৃশংস হত্যাযজ্ঞে’র ঘটনায় ‘উদ্বিগ্ন, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ’ এই ব্যক্তিত্বরা বলছেন, সামাজিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ উন্মোচন ও সক্রিয়তাই পারে ধর্মের নামে এসব উগ্রপন্থাকে রুখে দিতে।

সোমবার বিকালে গণমাধ্যমে তাদের পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশ কখনও কতিপয় বিপদগামীর কাছে পরাস্ত হতে পারে না।”

বিবৃতিতে জঙ্গি হামলার ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করে তারা বলেন, “জঙ্গি হামলায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ নিরীহ দেশি-বিদেশি ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ইতোপূর্বে তারা বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায়, মত ও পেশার দেশি-বিদেশি নাগরিক হত্যা করে এসেছে। এবারে তাদের আক্রমণ হয়েছে আরও ভয়াবহ।”

ধর্মীয় জঙ্গিবাদকে ‘বৈশ্বিক সমস্যা’ হিসেবে উল্লেখ করে এ চিন্তাধারার অনুসারীরা আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে বাংলাদেশে ‘ধারাবাহিক অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে’ বলেও অভিযোগ করেন এই বত্রিশ ব্যক্তিত্ব।

“একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীরা  ৪৫ বছর পর আন্তর্জাতিক পটভূমিতে পবিত্র ধর্মের নামে রক্তের হোলি খেলায় লিপ্ত হয়েছে। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঝুঁকির বার্তা পৌঁছে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। তাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের বিপরীতে মধ্যযুগীয় তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।”

যৌথ বিবৃতিতে অধ্যাপক এমিরেটাস আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, কাজী খলিকুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ  আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অজয় রায়, উদীচী সভাপতি কামাল লোহানী,  অজয় রায়, ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, আইনজীবী সুলতানা কামাল, ড. ফরাসউদ্দিন, ড. অনুপম সেন, ডা. সারওয়ার আলী, আইনজীবী রাণা দাশগুপ্ত স্বাক্ষর করেন।

এছাড়া নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আলী যাকের, মামুনুর রশীদ, রাশেদা কে চৌধুরী, গোলাম সারওয়ার, আবেদ খান, জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, সেলিনা হোসেন, আয়েশা খানম, মমতাজ বেগম, অধ্যাপক এম এম  আকাশ, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন্নবী, আবুল মোমেন, মনজুরুল আহসান বুলবুল, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, হারুনুর রশীদ ও কাজী সালাউদ্দিন বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।

শনিবার সকালে কমান্ডো অভিযানের পর নিহতদের লাশ রাখা হয় হলি আর্টিজান বেকারির সামনে।

গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফে ও শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান এলাকায় হামলার ঘটনায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোর শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।

“সাম্প্রতিক হামলায় হত্যাকারীদের অধিকাংশ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ সচ্ছল পরিবারের সন্তান। হত্যাকাণ্ডের অর্থ যোগানদাতা ও পরিকল্পনাকারীরা তাদের ধর্মের উগ্রবাদী ব্যাখ্যায় দীক্ষিত ও আচ্ছন্ন করেছে। অত্যাধুনিক ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত করে আত্মহননের পথে প্ররোচিত করেছে।”

উগ্রবাদিতা রুখতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রমে সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মমত্ব ও মানবিকতাবোধ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন তারা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সংঘবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলছেন, দেশের অগণিত মানুষ ধর্মের অবমাননা ও ধর্মের নামে নিষ্ঠুরতা মেনে নেবে না। তারা শান্তিপূর্ণ নিরাপদ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বদ্ধপরিকর। কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা এই জাতীয় কর্তব্য সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন একাত্তরের মতো সমাজের শক্তির ঐক্যবদ্ধ উন্মোচন ও সক্রিয়তা।

জঙ্গি হামলায় নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের ভূমিকায় তাদের সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করায় বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।