হাজারীবাগে থাকা ১৫৪ ট্যানারি সেখান থেকে না সরানো পর্যন্ত পরিবেশ দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 16 Jun 2016, 04:10 PM
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ এক আবেদনের শুনানিকালে বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।
ক্ষতিপূরণের ওই অর্থ সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কি না- তা তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিল্প সচিবকে। তাকে এ বিষয়ে ১৭ জুলাই প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত।
পাশাপাশি হাজারীবাগের ট্যানারি বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে পরিবেশের কী পরিমাণ ক্ষতি প্রতিদিন করা হচ্ছে- তা নিরূপণ করতে বলা হয়েছে পরিবেশ সচিবকে। তাকেও ১৭ জুলাই প্রতিবেদন দিতে বলেছে হাই কোর্ট।
শিল্প সচিব হাজারীবাগে থাকা ট্যানারির তালিকা বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে দাখিল করার পর আদালতের এই আদেশ আসে।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের আবেদনে গত ১৩ এপ্রিল ট্যানারির তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
রাজধানীর হাজারীবাগে যেসব ট্যানারি কারাখানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তার নাম ও ঠিকানাসহ বিস্তারিত বিবরণ জমা দিতে বলা হয়েছিল শিল্প সচিবকে।
বৃহস্পতিবার আদালতে ওই তালিকা জমা পড়ার পর আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী পরিবেশের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ট্যানারিগুলো প্রতিদিন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশনা চান হাই কোর্টের কাছে। শুনানি শেষে আদালত ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলেন।
আদালতে আবেদনকারীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। শিল্প সচিবের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. রইস উদ্দিন।
মনজিল মোরসেদ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিল্প সচিবের প্রতিবেদনে দেখা যায়, হাজারীবাগের ১৫৫টি ট্যানারি কারখানার মধ্যে কেবল রিলায়েন্স ট্যানারি লিমিটেড (ইউনিট-২) কারখানা স্থানান্তর করেছে; অন্যগুলো প্রক্রিয়াধীন।
“আমরা বলেছি, ২০১৩ সালে আদালতের নির্দেশনার পর এগুলো বন্ধ করার কথা ছিল। অথচ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের পরিচালিত কার্যক্রম আদালতের নির্দেশনা অমান্য করার শামিল। ওখানে ট্যানারির কার্যক্রম পরিচালনা করায় ঢাকার পরিবেশ রক্ষা ও বুড়িগঙ্গার দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।”
সরকারপক্ষের আবেদনে ওই সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানোর পরও ট্যানারি স্থানান্তরের আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল হাই কোর্ট আদালত অবমাননার রুল জারি করে।
এর ধারাবাহিকতায় শিল্প সচিব আদালতে হাজির হয়ে জানান, বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও দশটি প্রতিষ্ঠান হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে কারখানা সরানোর পদক্ষেপ নেয়নি।
ওই তথ্যের ভিত্তিতে আদালত দশ ট্যানারি মালিকের বিরুদ্ধে আদালত অবমানার রুল দেয় এবং পরে তাদের তলব করে।
এদিকে ‘হাজারীবাগ ট্যানারি মুক্ত হতে আরও দুই বছর!’ ও ‘নেতাদের ট্যানারির কাজ এগোয়নি’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সেগুলো যুক্ত করে নতুন একটি আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।
ওই আবেদনের প্রেক্ষিতেই হাই কোর্ট ট্যানারির তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেয়।