‘সচিত্র সতর্কবাণী বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য সচিবই বড় বাধা’

সকল তামাক পণ্যের মোড়কের উপরিভাগে সচিত্র সতর্কবার্তা ছাপার আইনি বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য সচিবকে সবচেয়ে বড় বাধা মনে করে তামাক বিরোধিতায় সক্রিয় একটি গবেষণা সংস্থা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2016, 06:33 PM
Updated : 14 June 2016, 06:33 PM

মঙ্গবলবার গবেষণা সংস্থা ‘প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা)’ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের, অথচ এই মন্ত্রণালয়ের সচিবই খোদ আইনটি বাস্তবায়নে বড় বাধা।

২০১৩ সালের এপ্রিলে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন’ যে কয়েকটি কারণে প্রশংসিত হয়েছিল, তার একটি ছবিযুক্ত সতর্কবার্তা।

আইনে তামাক পণ্যের মোড়কের উপরিভাগে অন্যূন শতকরা পঞ্চাশ ভাগ পরিমাণ স্থান জুড়ে তামাকপণ্যের ক্ষতি সম্পর্কিত এ সব সতর্কবার্তা মুদ্রণের নির্দেশনা দেয়। তবে কোন সতর্কবাতা ছাপা হবে তা ছেড়ে দেওয়া হয় বিধির উপর। তিনমাস অন্তর অন্তর এই ছবি নির্ধারণ করতে হবে বলেও বিধিতে বলে দেওয়া হয়।

এই বিধান বাস্তবায়নে আইনে সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু এর তিনদিন আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মোড়কের উপরিভাগের ৫০ শতাংশের পরিবর্তে নীচের ৫০ শতাংশে ছবি ছাপা যাবে বলে জানায়।

পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সুবিধা বহাল থাকলে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। এর আগে থেকেই তামাক কোম্পানিগুলো নীচের অংশে ছাপার এই দাবি জানিয়ে আসছিল।

তবে এই সুবিধা দিলে ছবিযুক্ত সতর্কবার্তার মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে বলে দাবি করে আসছিলো তামাক বিরোধীরা। তারা বলছিল, এতে তামাক পণ্য দোকানের ডিসপ্লেতে রাখলে ছবি ঢাকা পড়ে যাবে।

গণবিজ্ঞপ্তিটি কার্যকর হয়ে যাওয়ার পর তামাক বিরোধীরা তিন মাস পর ছবি পরিবর্তনের সময় মূল আইনটি বাস্তবায়ন করার দাবি করে। আগামী ১৯ জুন সেই দ্বিতীয় দফার তিন মাস শুরু হচ্ছে। তবে এখনও নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় এ বিষয়ে আবার কথা বলতে শুরু করেছে তামাক বিরোধীরা।

গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মোড়কের নীচের অংশে ছবিযুক্ত সতর্কবার্তা ছাপতে দেওয়া ছাড়ের সেই এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রজ্ঞা বলছে, জনস্বাস্থ্যের পক্ষে এমন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় আইন গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দুর্বল করে ফেলার এখতিয়ার আদৌ স্বাস্থ্যসচিবের আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরি।

তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তামাকবিরোধীদের দাবি এই রাউন্ড থেকেই যেন আইনসম্মতভাবে প্যাকেটের উপরিভাগের ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়।

“কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এ সংক্রান্ত একটি ফাইল স্বাস্থ্য সচিবের কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং আগামী অক্টোবর মাসের আগে এবিষয়ে কথা না বলার নির্দেশনা দেন।”

প্রজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব ২০১১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব থাকাকালীন সময়ে পদাধিকার বলে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পরিচালনা পর্ষদের নন-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

“জনশ্রুতি আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে তার পদোন্নতির পেছনেও বিএটিবি’র ভূমিকা ছিল। কাজেই স্বাস্থ্য সচিবের সিগারেট কোম্পানিপ্রীতি আশ্চর্যজনক কিছু নয়। তবে তা চরম জনস্বাস্থ্য বিরোধী এবং একইসাথে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথে বড় বাধা।”

এ বিষয়ে কথা বলতে স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল হকের সঙ্গে মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে ফোন ধরার অনুরোধ জানিয়ে ম্যাসেজ দেওয়ার পর জবাবে তিনি ম্যাসেজের মাধ্যমে বক্তব্য জানাতে বলেন।

সেখানে কবে থেকে তামাকপণ্যের উপরিভাগে ছবিযুক্ত সতর্কবার্তা মুদ্রিত হবে এবং তিনি এই প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন কি না- তা জানতে চাওয়া হয়। তবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও তার থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

২০১৩ সালের এপ্রিলে সংশোধিত ওই আইনে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার উভয় পাশে মূল প্রদর্শনী তলের অন্তত ৫০ ভাগ স্থানজুড়ে রঙিন ছবি ও লেখা সম্বলিত সতর্কবার্তা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। যে সব প্যাকেট চৌকোনা নয় সেগুলোর মূল প্রদর্শনী তলের উপরে ৫০ ভাগ স্থানে এই সতর্কবার্তা রাখতে বলা হয়।

প্রায় দুই বছর সময় নিয়ে ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা’ করে সরকার।

তাৎক্ষণিক কার্যকারিতা দিয়ে করা বিধিমালা মেনে চলতে বাধ্যবাধকতা আসতে ১২ মাস সময় পায় তামাক কোম্পানিগুলো। ছাড়ের এই সময়সীমা শেষ হয় ১৮ মার্চ। এরপর থেকে ছবিযুক্ত সতর্কবাণীর বাধ্যবাধকতা শুরু হয়।