সব ধরনের তামাক পণ্যের মোড়কে সচিত্র সতর্ক বার্তার বাধ্যবাধকতা কার্যকর হলেও প্রায় ৭৫ শতাংশ তামাক পণ্যে তা পাওয়া যায়নি বলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
Published : 19 Apr 2016, 05:51 PM
বাধ্যবাধকতা কার্যকর হওয়ার এক মাস পর সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার সমন্বয়ক মো. হাসান শাহরিয়ার।
২০১৩ সালের এপ্রিলে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন’- এ তামাক পণ্যে ছবিযুক্ত সতর্কতা বাধ্যতামূলক করা হয়। বিধির মাধ্যমে ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ থেকে এই বিধান কার্যকর হয়। তবে ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত রাখা হয় এক বছরের প্রস্তুতিমূলক সময়, যে সময়ে সতর্ক বার্তাহীন তামাক পণ্য বিক্রির সুযোগ থাকায় তামাক পণ্যের মোড়কে তা দেখা যায়নি।
গত ১৯ মার্চ থেকে সরকার নির্ধারিত ‘ছবিযুক্ত সতর্ক বার্তা’ ছাড়া কোনো তামাকপণ্য বিক্রির আইনগত সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
সচিত্র সতর্কবাণী বাস্তবায়নের ১৫দিন পর এই বিধান প্রতিপালনের অবস্থা জানতে গত ৪ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল দেশের আটটিবিভাগীয় শহরে পাঁচটি সূচক পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন করা হয়।
এতে দেখা যায়, যাচাই করা এক হাজার ৪৮৫টি সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুলের প্যাকেটের মধ্যে ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ (১ হাজার ১১১) প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী নেই। এর মধ্যে ১৪ ব্রান্ডের ৮৮টি বিড়ির প্যাকেটের একটিতেও সচিত্র স্বাস্থ্য সর্তকবার্তা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৫টি ব্রান্ডের ৭০০টি সিগারেট প্যাকেটের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্যাকেটেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ছিল না। সিগারেট উৎপাদনকারী ৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি প্রতিষ্ঠানই সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ ছাড়াই সিগারেট বাজারজাত করছে।
“২০৮টি ব্রান্ডের ৬৩৯টি জর্দার কৌটার মধ্যে ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ কৌটাতেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মেলেনি। ১৬টি ব্রান্ডের ৫৮টি গুল কৌটার ৮৭ দশমিক ৯ শতাংশ কৌটাতে কোনো সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পরিলক্ষিত হয়নি। গবেষণায় প্রাপ্ত ১০০টি জর্দা কারখানার মধ্যে মাত্র ১৪টি এবং ১৩টি গুল কারখানার মধ্যে মাত্র ১টি গুল কারখানা সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করছে।”
এছাড়া ৫৪টি জর্দার কৌটার মধ্যে আইন অনুসারে কৌটার উপরে কিংবা নিচের অংশের উভয় পাশে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে (৫টি) । গুলের ক্ষেত্রে মোট ৭টি কৌটায় সচিত্র সতর্কবাণী পাওয়া গেছে, যার সবগুলোই আইন মেনে উপরের উভয় পাশে মুদ্রণ করা হয়েছে।
“জর্দার ক্ষেত্রে ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ কৌটায় ৫০ ভাগ জায়গাজুড়ে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়নি।
“৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ (৩০টি) জর্দার কৌটাতে সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্য ক্ষতির ছবি ব্যবহার না করে অন্য ছবি মুদ্রণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৭০ দশমিক ৪ শতাংশ জর্দার কৌটায় সরকার নির্ধারিত সতর্কবার্তার পরিবর্তে অন্য বার্তা ব্যবহার করা হয়েছে এবং ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ (৩১টি) জর্দার কৌটায় সতর্কবার্তা কালো জমিনের উপর সাদা অক্ষরে লেখা নেই।
“সিগারেট প্যাকেটে ‘শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত’ বিবৃতিটি মুদ্রণ করা হলেও ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ (৪৩টি) জর্দা এবং ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ (৫টি) গুলের কৌটায় বিবৃতিটি মুদ্রণ করা হয়নি। তামাক পণ্যের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে এটি জোরালো ভূমিকা পালন করে থাকে।”
এ পরিস্থিতি বিধান প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিকভাবে তামাক কোম্পানিগুলোকে প্যাকেট বা কৌটার অন্যূন ৫০ ভাগ স্থানজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণে বাধ্য করা, আইন লংঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে জরিমানা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বিহীন তামাকপণ্য ধ্বংস করা এবং বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, মোবাইল কোর্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং আইন বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আটটি বিভাগীয় শহরে সাতটি তামাকবিরোধী সংগঠন এসিডি, আহছানিয়া মিশন, সিমান্তিক, উবিনিগ, ইপশা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এবং ইসি বাংলাদেশ তথ্য সংগ্রহ করেছে। এতে কারিগরি সহায়তা প্রদান, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন তৈরির কাজ করেছে প্রজ্ঞা। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্ এতে সার্বিক সহায়তা দিয়েছে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম, দি ইউনিয়নের টেকনিক্যাল এডভাইজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) গ্রান্টস ম্যানেজার ডা. মাহফুজুল হক ভুঁইঞা প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।