জামায়াতে ইসলামীর অর্থ জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেম আলীর বিত্তের প্রভাব এই যুদ্ধাপরাধীর আপিলের রায় প্রভাবিত করবে বলে ফের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।
Published : 02 Mar 2016, 11:55 PM
তার আপিলের শুনানিতে উচ্চ আদালত থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি নজরুল ইসলামের অংশ নেওয়ার ঘটনাটি তুলে ধরে বুধবার শাহবাগে এক সমাবেশ থেকে এই আশঙ্কার কথা জানান মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
তিনি বলেন, “আমাদের মধ্য আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এই নজরুল ইসলামের মতো বিচারপতিরাই তো আদালতে বিচার করবেন। এরা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষে সহমর্মী হবেন না, এর নিশ্চয়তা কোথায়?
“আমরা প্রত্যাশা করব, নজরুল ইসলামের মতো বিচারপতি বিচার করবে না, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়।”
হাই কোর্ট থেকে অবসরে যাওয়ার পর সরকারি বিভিন্ন সুবিধা পাওয়ার মধ্যেই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মীর কাসেমের পক্ষে আপিল বিভাগে শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম। এ নিয়ে সমালোচনা উঠলে পরে নিজেকে এই মামলা থেকে সরিয়ে নেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনকারীরা এই ঘটনার পর থেকে মীর কাসেমের মামলা নিয়ে নিজেদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে আসছে। আগামী ৮ মার্চ চূড়ান্ত রায়ের আগে নানা কর্মসূচিও পালন করছে তারা।
মীর কাসেমকে ‘রক্ষার ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে বুধবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন মঞ্চের কর্মীরা। চূড়ান্ত রায়েও এই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেন তারা।
কর্মসূচিতে ইমরান বলেন, “আল বদর কমান্ডার মীর কাসেমের বিচার শুরু হওয়ায় পর থেকে শঙ্কা ছিল। তার সম্পদ প্রতিপত্তি ব্যবহার করে বিচার বাধাগ্রস্ত করে কি না, এই আশঙ্কা এখনও আছে। তার পরিবার গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক খবর ছাপিয়ে যাচ্ছে।”
তবে ৩০ লাখ মানুষকে যারা হত্যা করেছিল, তাদের হয়ে আদালতে দাঁড়াবে না, এই প্রত্যাশা রেখেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র।
আগামী ৪ ও ৬ মার্চ বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টার পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে ইমরান জানান। এছাড়া আপিলের রায়ের দিন ৮ মার্চ সকাল থেকে শাহবাগে অবস্থান থাকবে।
দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং দিগন্ত টেলিভিশনের মালিকানা প্রতিষ্ঠান দিগন্ত মিডিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান মীর কাসেম ইবনে সিনা ট্রাস্টেরও অন্যতম সদস্য।
মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ আটজনকে হত্যার দুটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তখনকার আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীকে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল।
মীর কাসেমের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে যে ভবনটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হতো, সেই ডালিম হোটেলকে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয় ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’।
বিচারক ওই রায়ে বলেন, “আলবদর সদস্য ও পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ডালিম হোটেলে নিয়ে আসতো আমৃত্যু নির্যাতন করার উদ্দেশ্যেই। এটাও প্রমাণিত যে, ডালিম হোটেলে আলবদর সদস্যদের পরিচালনা ও নির্দেশনা দিতেন মীর কাসেম আলী নিজে। ডালিম হোটেল সত্যিকার অর্থেই ছিল একটি ‘মৃত্যুর কারখানা’।”
ডালিম হোটেল ছাড়াও নগরীর চাক্তাই চামড়ার গুদামের দোস্ত মোহাম্মদ বিল্ডিং, দেওয়ানহাটের দেওয়ান হোটেল ও পাঁচলাইশ এলাকার সালমা মঞ্জিলে বদর বাহিনীর আলাদা ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র ছিল।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে মীর কাসেমের আপিলের শুনানি নিয়ে ৮ মার্চ রায় দেওয়ার দিন ঠিক করেছে আপিল বিভাগ।