বুকের সঙ্গে ঠেসে ধরা পত্রিকা আর বই হাতে খোলা দরজার মুখে দাঁড়িয়ে হুমায়ুন আহমেদ, যেন কোনো অতিথিকে ভেতরে এগিয়ে নিতে প্রস্তুত তিনি। সামনে দিয়ে যেতে যে কারও মনে হতে পারে, এই নন্দিত কথাসাহিত্যিক তাকেই বোধ হয় সম্ভাষণ জানাচ্ছেন!
Published : 11 Feb 2016, 10:04 PM
প্রয়াত লেখক হুমায়ুনের এমন একটি ছবি স্থান পেয়েছে অমর একুশে বইমেলায় অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়নে।
প্যাভিলিয়নের দুটি স্তম্ভে সেঁটে দেওয়া হয়েছে বড় বড় অক্ষরে ছাপানো হুমায়ুন আহমেদের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির অংশ বিশেষ। সেখানে একদিকের উপরে ১৫ খণ্ডে বের করা তার রচনাবলী বইটির রেপ্লিকা।
আরেক দিকের উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে অন্যপ্রকাশ থেকে বের হওয়া ১৫ লেখকের ‘সেরা দশ গল্প’ সিরিজের ১৫টি বইয়ের রেপ্লিকা। তার ভেতের থরে থরে সাজানো বই।
বইয়ের মেলায় এভাবে সৃজনশীলতার ছাপ রেখে সেজেছে অনেক স্টল। কিছু প্রতিষ্ঠানের স্টল সজ্জায় বইয়ের ওপরও প্রাধান্য এসেছে।
অন্যপ্রকাশের এবারের স্টলের নকশা করেছেন শিল্পী ইব্রাহীম খলিল, পরামর্শ দিয়েছেন অন্যপ্রকাশের মালিক মাজহারুল ইসলাম।
“আমাদের স্টল সব সময় শৈল্পিক ও নান্দনিক উপায়ে সাজানোর চেষ্টা করি। আর তা করা হয় হুমায়ুন আহমেদকে ঘিরেই। তার বই ও প্রতিকৃতি দিয়ে আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই,” বলেন মাজহার।
ইউপিএলের চার দশক উদযাপন ঘিরে তাদের এই সাজ। স্টলের গায়েও বড় করে লেখা ‘প্রকাশনা উৎকর্ষে চল্লিশ বছর’। সে সঙ্গে প্যাভিলিয়নের গায়ে ইউপিএলের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও রয়েছে।
ইউপিএল প্যাভিলিয়নের নকশাকার শিল্পী আসিফ ইমতিয়াজ তনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত বছর ইউপিএলের স্টলের থিম ছিল শেলফে থরে থরে সাজানো বইয়ের। তার ধারাবাহিকতায় এবার একটি বইকে কেন্দ্র করে স্টলটি সাজানো হয়েছে।
“দরজার মুখটা বড় করে খোলা আর অন্যান্য অংশও করা হয়েছে বইয়ের পাতার মতো করে। উপরের টিনটাও বইয়ের পাতার প্রতীক হিসাবে নিয়েছি।”
বাংলা একাডেমির সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণের প্যাভিলিয়নের নকশা একাডেমির বর্ধমান হাউসের আদলে করা হয়েছে। একাডেমির হীরকজয়ন্তি উপলক্ষে প্যাভিলিয়নের এই রূপ দেওয়া হয়েছে বলে এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মেহের আফরোজ শাওনের নকশায় অবসর প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের চারপাশে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম ও হুমায়ূন আহমেদের স্বাক্ষরের প্রতিরূপ।
শিশুদের বই বের করা এই প্রতিষ্ঠানটির স্টলসজ্জা ‘শিশুদের মনের মতো’ করে করার চেষ্টার কথা জানিয়েছেন এর নকশাকার শিল্পী রাজীব রাজু।
মেলার সোহরাওয়ারর্দী প্রাঙ্গণের প্রবেশপথে কিছু দূর এগোলেই সময় প্রকাশনের প্যাভিলিয়ন। তিন দিকের উপরের অংশের কোণে কোণে রাখা হয়েছে বড় বড় বইয়ের রেপ্লিকা। আর ভেতরের বিলবোর্ডেও রয়েছে নানা রকম বইয়ের প্রচ্ছদ।
বাঁশ দিয়ে তৈরি ঘরের আদলে সেজেছে জনান্তিকের স্টল। এক দিকে খোলা এবং জানালার ফাঁক দিয়ে বই দেখার ব্যবস্থা সেখানে। চাইলে দরজা দিয়ে স্টলে প্রবেশের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো এবারের বইমেলায় আসেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।
অনন্যা প্রকাশনীর স্টলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এখন থেকে প্রতিদিনই মেলায় আসব। এবার বেশ পরিচ্ছন্ন মেলা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মেলার পরিধি বাড়ছে। স্টল বিন্যাস, অলঙ্করণ, নান্দনিক গ্রন্থ প্রকাশসহ সার্বিক বিবেচনায় অত্যন্ত সুন্দর মেলা হচ্ছে।”
নানন্দিক স্টল সজ্জার জন্য গত বছর থেকে কাইয়ূম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়েছে। এবার কার ঘরে এই পুরস্কার আসবে সেই অপেক্ষায় আছেন প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা।