অবসরকালীন সুবিধায় থাকা বিচারক যুদ্ধাপরাধীর আইনজীবী

হাই কোর্ট থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া একজন বিচারক অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা অবস্থায় যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আইনজীবী হিসেবে মামলা লড়ছেন, যা ‘নৈতিকতার চরম বিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2016, 03:48 PM
Updated : 10 Feb 2016, 04:30 PM

সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ থেকে গতবছর ১২ ডিসেম্বর অবসরে যাওয়া বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী যুদ্ধাপরাধের এ মামলায় জামায়াত নেতা মীর কাসেমের আইনজীবী।

বুধবার তিনি এই আপিল মামলায় দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে উপস্থিত হলে বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তিনি বলেন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী হাই কোর্টের বিচারক হিসেবে অবসরকালীন সুবিধা ভোগ করছেন। তিনি সরকারি বাসভবন, গাড়ি ও গানম্যান পাচ্ছেন।

এ অবস্থায় তিনি একজন ব্যক্তির পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারেন কি না- সে বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এ সময় বলেন, “সাবেক ও বর্তমান বিচারপতিরা রীতি ও আইন মেনে চলবেন বলে আশা করি।”

এ দিন শুনানিতে মীর কাসেমের পক্ষে তার আইনজীবী এস এম শাহজাহানের পাশাপাশি নজরুল ইসলাম চৌধুরীও পেপারবুক থেকে উপস্থাপন করেন। পরে আইনজীবী এস এম শাহজাহান যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি যদি এ অবস্থায় আইনজীবী হিসেবে আদালতে উপস্থিত হন, সেটি হবে নৈতিকতার চরম বিরোধী। তার এই মামলায় না আসাই বাঞ্ছনীয়।

“আমার এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সব বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে, যারা বিচারালয়ে আসীন আছেন বা অবসরপ্রাপ্ত, জাজেস কমপ্লেক্সে যারা থাকবেন, তারা যাতে বিচারপতিদের বাসস্থানের মর্যাদা ও গুরুত্ব রক্ষা করেন।”

সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদের ২ এর (১) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর আপিল বিভাগে ওকালতি করতে পারেন।

সে অনুযায়ী বিচারপতি নজরুল ইসলামের আইন পেশায় নিয়োজিত হতে বাধা না থাকলেও অবসরোত্তর ছুটিতে সরকারি সুবিধায় থাকা অবস্থায় তার এ ভূমিকা ‘নৈতিকতার লঙ্ঘন’ বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

“স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের প্রয়াত সিরাজুল হক সাহেব যখন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পক্ষে মামলা লড়তে গেলেন, উনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করে তারপর গিয়েছিলেন। এটা হলো আমাদের আইনজীবীদের নৈতিকতার বিষয়।”

অন্যদিকে মীর কাসেম আলীর আইনজীবী নজরুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আইনে সুযোগ আছে বলেই তিনি সরকারি সুবিধা ব্যবহার করছেন।

“অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব বলছিলেন, সরকারি বাড়ি ও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে প্র্যাকটিস করা শোভনীয় না। তখন প্রধান বিচারপতি বললেন, এটা প্রিভিলেজ। অনেকদিন চাকরি করার পর এক বছর বিচারপতিরা বাড়িতে থাকতে পারে, এক বছর গাড়িও ব্যবহার করতে পারে।

“আর আমাকে উনি (প্রধান বিচারপতি) বললেন, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আমি বললাম …আমি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। সরকারি বাড়ি ও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে এর অপব্যবহার কোনোদিন আগেও হতে দিইনি, এখনও দিচ্ছি না। আর কয়েকটা মাস থাকব, এ সময়েও হতে দেব না।”

নজরুল ইসলাম চৌধুরী ২০০১ সালের ৩ জুলাই হাই কোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০০৩ সালের ৩ জুলাই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তার নিয়োগ স্থায়ী হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাস করার পর তিনি আইন পেশায় আসেন এবং ১৯৭৭ সালে হাই কোর্টে ও ১৯৯২ সালে আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত হন।