চা বিক্রেতার মৃত্যুর ঘটনায় ৫ পুলিশ বরখাস্ত

চুলার ছিটকে পড়া তেলের আগুনে দগ্ধ হয়ে চা বিক্রেতা বাবুল মাতুব্বরের মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর শাহআলী থানার পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2016, 05:24 PM
Updated : 4 Feb 2016, 07:50 PM

বুধবার রাতের এই ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর আলোচনার পর রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এতথ্য জানান।

এরা হলেন- উপ-পরিদর্শক মোমিনুর রহমান খান, শ্রীধাম চন্দ্র হাওলাদার ও নিয়াজ উদ্দিন মোল্লা, সহকারী উপ পরিদর্শক দেবেন্দ্র নাথ এবং কনস্টেবল জসিম উদ্দিন।

এদের মধ্যে শ্রীধাম ছাড়া বাকি চারজনকে দুপুরেই প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছিলেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জসিম উদ্দীন মোল্লা (প্রশাসন)।

বুধবার রাতে মিরপুরের গুদারা ঘাট এলাকায় চা দোকানি বাবুল তার দোকানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বাবুলের পরিবারের অভিযোগ, চাঁদা না পেয়ে পুলিশ বাবুলের দোকানের কেরোসিনের চুলায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল। এতে কেরোসিন ছিটকে বাবুলের গায়ে আগুন ধরে যায়।

অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে শাহআলী থানা থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ নয়, সোর্স দেখে পালাতে গিয়ে বাবুল দগ্ধ হন। আর বাবুল নিজেও মাদক বিক্রেতা ছিলেন।

পুলিশের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক কয়েকটি অভিযোগের পর এই ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর আলোচনা ছিল দেশজুড়ে।

পুলিশের ‘জঘন্য’ আচরণের নিন্দা জানিয়ে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতি চেয়ে দাবি উঠেছে। মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাবুল মাতুব্বরের মৃত্যুর পর পুলিশের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

এই ঘটনা তদন্তে পুলিশ একটি কমিটি গঠন করেছে বলেও জানান উপ-কমিশনার মারুফ।

মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাসুদ আহমেদ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এবং সহকারী কমিশনার মাহবুব হোসেনকে নিয়ে এই কমিটি হয়েছে।

“দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে,” বলেন মারুফ।

এছাড়া মহানগর পুলিশের সদর দপ্তর থেকে উপ-কমিশনার (ডিসিপ্লিন) টুটুল চক্রবর্তীকে ঘটনাটি আলাদাভাবে তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে ঘটনার পরপরই পুলিশ ‘তড়িঘড়ি’ করে বাবুলের পরিবারকে দিয়ে একটি মামলা করিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলায় কোনো পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়নি।

বাবুলের মেয়ে রোকসানা আকতারের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে স্থানীয় কয়েকজন ‘মাদক ব্যবসায়ীকে’। এদের মধ্যে পুলিশ পারুল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

হাসপাতালে বাবুলের স্বজনের কান্না

নিহত বাবুল মাতুব্বর

বাবুলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা আড়াল করতেই পুলিশ এই মামলা করিয়েছে। 

বাবুলের মেয়ে লাবণী আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার পর আমরা থানায় গিয়েছিলাম পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে, কিন্তু মামলা নেয়নি। পুলিশের নাম বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে মামলা রেকর্ড করে।”

ঘটনার পর পুলিশ অগ্নিদগ্ধ বাবুলকে হাসপাতালের বদলে থানায় নিয়েছিল বলে জানান তার এই মেয়ে।

পুলিশ আমার বাবাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করেনি। আমরাই পরে হাসপাতালে নিয়ে যাই।” 

তারা পুলিশের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করবেন বলে জানান লাবণী।