ঘটনা ঘটার চার ঘণ্টার মধ্যে বুধবার মধ্যরাতে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই একটি মামলা নেয় থানা, যেখানে পুলিশের কোনো সদস্যকে আসামি করা হয়নি।
বুধবার রাত দেড়টার দিকে দগ্ধ বাবুল মাতুব্বরের মেয়ে রোকসানা আকতারের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে স্থানীয় কয়েকজন ‘মাদক ব্যবসায়ীকে’।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- পারুল, দেলোয়ার, রবিন, শংকর, দুলাল হাওলাদার এবং পারভীন। এদের মধ্যে পুলিশ পারুলকে গ্রেপ্তার করেছে।
বাবুলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা আড়াল করতেই পুলিশ এই মামলা করিয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শাহঅলী থানার ওসি একেএম শাহীন মণ্ডল বলেছেন, মামলা যথানিয়মেই হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাবুল। তার মৃত্যুর পর চার পুলিশ সদস্যকে শাহআলী থানা থেকে সরানো হয়েছে।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, বুধবার রাত ৯টায় মিরপুর ১ নম্বর গুদারাঘাটে চাঁদা না পেয়ে পুলিশ বাবুলের দোকানের কেরোসিনের চুলায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে কেরোসিন ছিটকে বাবুলের গায়ে লাগে এবং আগুন ধরে যায়। ফলে তিনি দগ্ধ হন। তার শরীরের শতকরা ৯০ ভাগ পুড়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাবুলের পরিবারের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চিকিৎসা নিয়ে যখন পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত ছিল, তখন পুলিশ ব্যস্ত হয়ে উঠে মামলা করা নিয়ে।
রাত ৯টায় ঘটনার পর প্রায় ৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ মামলটি নথিভুক্ত করে বলে জানান তিনি; যেখানে অনেক সময় হত্যার ঘটনায়ও মামলা নথিভুক্ত করতে পুলিশকে অনেক দেরি করতে দেখা যায়।
শাহআলী থানার এসআই মোরশেদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাত দেড়টার দিকে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।
বাবুলের মেয়ে লাবণী আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনার পর আমরা থানায় গিয়েছিলাম পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে, কিন্তু মামলা নেয়নি। পুলিশের নাম বাদ দিয়ে তড়িঘড়ি করে মামলা রেকর্ড করে।”
ঘটনার পর পুলিশ অগ্নিদগ্ধ বাবুলকে হাসপাতালের বদলে থানায় নিয়েছিল বলে জানান তার এই মেয়ে।
“পুলিশ আমার বাবাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করেনি। আমরাই পরে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
তারা পুলিশের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করবেন বলে জানান লাবণী।
তবে ওসি শাহীন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “যথানিয়মেই মামলা হয়েছে। কাউকে কোনো চাপ দিয়ে মামলা হয়নি। আর মামলা না করলে আসামি ধরব কেমন করে?
“তদন্তে পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।”
শুরু থেকে পুলিশের দাবি ছিল, পুলিশ নয়, সোর্স দেখে পালাতে গিয়ে বাবুল দগ্ধ হন। বাবুল নিজেও মাদক বিক্রেতা ছিলেন বলে পুলিশের বক্তব্য।
মামলায় যাদের নাম এসেছে, তারাও সবাই মাদক বিক্রিতে জড়িত বলে দাবি করেছেন থানার এসআই মোরশেদ।
তিনি বলেন, “বাবুলের বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে একটা অভ্যন্তরীণ বিরোধ ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করেই পারভীনের ইন্ধনে দেলোয়ার এবং তার সহযোগীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”