কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার পুরনো চিত্রের দেখা মিলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালক মিটার অনুযায়ী ভাড়া নিতে আগ্রহী নন। হয় তারা মিটার বন্ধ রাখেন, নয়তো মিটার ওঠা ভাড়ার চেয়ে বেশি দাবি করেন।
গত মাসে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারণের পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মিটার চালু রাখার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দিলেও সড়কে তার প্রতিফলন নেই, তাই যাত্রীদের আগের দুর্ভোগই ফিরে এসেছে।
ভাড়ার হার বাড়ানোর পরও কেন মিটারে চলতে আপত্তি- জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন অটোরিকশা চালকের কাছ থেকে একই উত্তর আসে- ‘মিটারে পোষায় না’।
চালকদের অভিযোগ, অটোরিকশার মালিকরা সরকারি নির্দেশনার চেয়ে বেশি জমার টাকা নেওয়ায় ‘বাধ্য’ হয়ে বেশি ভাড়া চাইছেন তারা।
রাজধানীর মহাখালী এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আদিল হোসেন তার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।
আদিল বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকালে বিশেষ কাজে পল্টন যাওয়ার কথা ছিল। অফিস থেকে বেরিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঠিক করছিলাম।
“ড্রাইভার আমার কাছে ২০০ টাকা ভাড়া চাইল। আমি বললাম, মিটারে যাবেন? তার সোজাসাপ্টা জবাব, না।”
সেসময় পাশে আরও দুই-তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিল জানিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আদিল বলেন, “সেগুলোর চালকদেরও একই কথা; মিটারে যাবেন না তারা।”
“শেষে ২০০ টাকা দিয়েই আমাকে পল্টনে যেতে হল। মহাখালী থেকে পল্টনের যে দুরত্ব, তাতে যানজট থাকলেও ১২০ টাকার বেশি মিটারে ওঠার কথা না,” ক্ষোভের সুরে বলেন তিনি।
তেজগাঁওয়ের একটি স্কুলের শিক্ষিকা শারমিন নাহার, থাকেন মোহাম্মদপুরে। মাঝেমধ্যেই তাকে চড়তে হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মিটারে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ২০-৩০ টাকা বেশি ভাড়া আদায় তো নিয়মিত ঘটনাই; অনেক সময় মিটারও ঠিক থাকে না।
“অনেক সময় চলতে চলতে মাঝপথে মিটার বন্ধ হয়ে যায়। আর অফিস আওয়ারে তো অনেক চালকই মিটারে যেতে চায় না।”
২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে সাধারণ যাত্রীদের জন্য ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা সেবা চালু হয়। আগের দুই স্ট্রোক বেবি ট্যাক্সি/স্কুটারের স্থলে আসে চার স্ট্রোকের সিএনজিচালিত এই গাড়ি।
শুরুর দিকে এই গাড়িতে মিটার চালু থাকলেও মাঝে বেশ কয়েক বছর মিটার বন্ধ রেখে যাত্রীদের কাছে ইচ্ছেমতো ভাড়া চাইতেন চালকরা।
সর্বশেষ ‘বিআরটিএ কড়াকড়ি’ আরোপ করলেও চালকদের তা না মানার কারণ জানতে কথা হয় মো. মোস্তফা নামের এক চালকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “মিটার অনুযায়ী ভাড়ায় আমাদের পোষায় না। এই কারণে ১০-২০ টাকা বেশি নেই।”
মিটার বন্ধ থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে মোস্তফা বলেন, “অন্যদের কথা জানি না। আমি শুধু রাত ১০টার পর মিটার বন্ধ রাখি। সারাদিনই চালু রাখি।”
গত মাসে সরকার সিএনজি অটোরিকশার ভাড়ার হার বাড়ায়। প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য এখন ভাড়া ৪০ টাকা, যা আগে ২৫ টাকা ছিল। এরপর প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা করা হয়।
মালিকদের কাছে চালকদের দৈনিক জমার পরিমাণও ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা করা হয়।
যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সমস্যার মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেন গাড়ির মালিকদের।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোনো মালিক নির্দেশনা মানে না। ড্রাইভারদের কাছ থেকে তারা ১০০০-১৪০০ টাকা করে জমা রাখছেন। বর্তমানে সিএনজিচালিত অটোরিকশার তুলনায় চালকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মালিকরা এই সুযোগ নিচ্ছে।”
জমার টাকা বেশি নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মালিকদের সংগঠন ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি বলে এলেও তার কোনো প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যায় না।
গত মাসে ভাড়ার হার বাড়ানোর পর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমএইচ ইকবাল মিরাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “যদি কোনো মালিক অতিরিক্ত জমার টাকা আদায় করে তাহলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেব। একই সাথে দাবি জানাব, ওই মালিকের রুট পারমিট যেন বাতিল করে দেওয়া হয়।”
এ বিষয়ে বিআরটিএ’র এনফোর্সমেন্ট শাখার পরিচালক বিজয় ভূষণ পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই জায়গায় অনিয়ম চলছিল। আমরা চেষ্টা করছি, গোটা বিষয়টিকে নিয়মের মধ্যে আনার।
“আমাদের মোবাইল কোর্ট চালু আছে। বিআরটিএর পক্ষে যা যা করণীয় করা হচ্ছে। রাতারাতি কোনো কিছু পরিবর্তন সম্ভব নয়, তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।”