নভেম্বরের প্রথম দিন থেকে বাংলাদেশে প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া, যদিও শেষ পর্যন্ত মিটার মেনে ওই ভাড়ায় তিন চাকার এই বাহনে চড়া যাবে কি না- সে বিষয়ে সংশয়ে আছে নগরবাসী।
Published : 29 Oct 2015, 10:47 AM
ভাড়া বৃদ্ধিকে একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে তা কাজে লাগাতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছে অটোরিকশা মালিক সমিতি। আর চালকদের এক নেতা বলেছেন, মালিকরা ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া জমার চেয়ে বেশি না নিলে’ মিটার মেনে ভাড়া নিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
এর আগে ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের জন্য অটোরিকশার কিলোমিটারপ্রতি যে ভাড়া এবং মালিকদের দৈনিক জমার পরিমাণ ঠিক করে দিয়েছিল, তা কখনোই কার্যকর করা যায়নি।
মালিক বেশি জমা আদায় করে এবং যানজটের মধ্যে মিটারে গেলে পোষায় না- এই যুক্তিতে নিজেদের ইচ্ছামাফিক ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করে আসছেন চালকরা। উপায়হীন যাত্রীরাও মিটারে ওঠা ভাড়ার দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা খরচ করে অটোরিকশায় চড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
গণপরিবহনের এই নৈরাজ্য নিয়ে খোদ মন্ত্রীও একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু সরকারের কোনো নির্দেশনা কাজে আসেনি।
সম্প্রতি সরকার সিএনজির দাম বাড়ানোর পর অটোরিকশার ভাড়াও পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে, যা কার্যকর হবে আগামী রোববার থেকে। প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ৪০ টাকা, যা আগে ২৫ টাকা ছিল।
অটোরিকশায় উঠলে এটাই সর্বনিম্ন ভাড়া হওয়ার কথা, যদিও ওই ভাড়া বা ওই দূরত্বে যেতে কখনোই রাজি হন না চালকরা।
এবার প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা করা হয়েছে। যানজট বা অন্য কোনো কারণে আটকে থাকলে প্রতি মিনিট বিরতির জন্য গুণতে হবে ২ টাকা করে, আগে যা ১ টাকা ৪ পয়সা ছিল।
চালকদের জন্য দৈনিক জমার পরিমাণও বেড়েছে। মালিকের জমা বাবদ এখন প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা করে দিতে হবে চালককে, এতোদিন যার পরিমাণ ছিল ৬০০ টাকা।
তবে ভাড়া বাড়ানোর পরও চালকরা মিটারে যেতে রাজি হবেন কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
“সরকার ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে ঠিক, কিন্তু আদৌ এটি কেউ মানবে কি না তা নিশ্চিত হতে পারছি না,” বলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আসমা হক মিতা।
গণপরিবহনে নৈরাজ্যের জন্য সরকার, তদারককারী কর্তৃপক্ষ এবং চালক-মালিকদের দায়ী করে তিনি বলেন, “এদেশ হল হরিলুটের দেশ। সাধারণ মানুষ সবার কাছে জিম্মি।”
এক সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মী আমিনুল ইসলাম বলেন, “বাসে ভিড় থাকলে বা দ্রুত কোথাও যেতে মানুষ অটোরিকশা খোঁজে।কিন্তু মিটারে না চলায় মানুষ আস্থা রাখতে পারে না। এতদিন তো কোনো অটোচালককে মিটার ব্যবহারে রাজি করানো যায়নি, এখন কীভাবে হবে?”
ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বলছেন, নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে মালিকদের বিষয়ে কঠোর হতে হবে।
“সরকার কঠোর হলে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, না হলে এটি শুধু নিয়ম হিসেবেই থেকে যাবে।”
তিনি বলেন, “অনেক মালিক এখনই দিনে ১২০০ টাকা জমা নেন। যদি তারা ৯০০ টাকা করে নেন তাহলে মিটারে চালাতে আপত্তি থাকবে কেন?”
কোনো মালিক সরকারি সিদ্ধান্ত মানতে না চাইলে তার রুট পারমিট বাতিল করার বিধান চালুর দাবি জানান জাকির।
তার এ দাবির সঙ্গে একমত ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমএইচ ইকবাল মিরাজ।
তিনি বলেন, “যদি কোনো মালিক অতিরিক্ত জমার টাকা আদায় করে তাহলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেব। একই সাথে দাবি জানাব ওই মালিকের রুট পারমিট যেন বাতিল করে দেওয়া হয়।”
সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিআরটিএর সঙ্গে মালিক সমিতিও মাঠে থাকবে জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরাও এতটা লোভী হতে চাই না। সরকার যে সুযোগ দিয়েছে তাতে আমরা চাই, এবার অন্তত যেন অটোরিকশা মিটারে চলে।”
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর উপ–পরিচালক মাহবুবে রাব্বানি জানিয়েছেন, অটোরিকশা যাতে মিটারে চলে সেজন্য তাদের কড়া নজরদারি থাকবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলছে কি না তা দেখতে ইতোমধ্যে চালক, মালিক, বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম তৈরি করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকেই এ টিম কাজ শুরু করবে।”
এছাড়াও রাস্তায় বিআরটিএ’র মোবাইল কোর্ট থাকবে। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া মাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে মালিকদের অতিরিক্ত হারে জমা আদায় বন্ধে তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই বিআরটিএ’র।
মাহবুবে রাব্বানি বলেন, “কোনো মালিক যদি নির্ধারিত হারের বেশি জমার টাকা নেয় এবং আমাদের কাছে যদি অভিযোগ আসে তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”