হরতালে মাঠে নেই জামায়াত-শিবির, কড়া নিরাপত্তা

যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করার পর তার দল জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালে সারা দেশে ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2015, 03:45 AM
Updated : 23 Nov 2015, 07:16 AM

সোমবার হরতালের শুরু থেকে রাজধানী ঢাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীদের কোনো মিছিল বা তৎপরতার খবর পাওয়া যায়নি। কোথাও কোনো গোলযোগও ঘটেনি বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পুলিশের ক্রাইম কন্ট্রোল রুমের সহকারী উপ-পরিদর্শক খলিলুর রহমান বলেন, “দিনের প্রথমভাগে রাজধানীর কোথাও কোনো নাশকতা বা বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।”

মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাদের পর‌্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।

“যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে।”

দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের কারণে গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকাসহ সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা বজায় রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সোমবার জামায়াতের হরতালের সকালেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে সশস্ত্র পুলিশ দেখা গেছে। টহলে রয়েছেন র্যা ব সদস্যরাও।  

হরতালের দিনের শুরুতে ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি কিছুটা কম দেখা গেলেও গণপরিবহন চলাচল করেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে গাড়ির চাপ।

অবশ্য অন্যান্য দিনের তুলনায় যানজট কম এবং রাস্তা ফাঁকা বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা মুন্নি আক্তার।

এদিকে হরতালের সময় মেনে দূর পাল্লার বাস ও ট্রেন ছাড়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “সোমবার সকাল থেকে ১৬টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে গেছে। ট্রেনের সময়সূচির কোনো হেরফের হয়নি।”

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীও দূর পাল্লার বাস ছাড়ার কথা জানান।

“জামাতের হরতাল তো কেউ মানতে চায় না। কম হলেও দূরপাল্লার যাত্রীরা বিভিন্ন বাস স্টেশনে জড়ো হচ্ছেন। তাদের নিয়েই বাস ছাড়ছে।”

কল কারখানা, অফিস-আদালতে অন্য দিনের মতোই কাজ শুরু হয়েছে। সকালে স্বাভাবিকভাবেই কাজে বেরিয়েছেন কর্মজীবী মানুষ।

আদাবর এলাকার বাসিন্দা এস.আর খান (৭৫) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত অপরাধীদের দলের ডাকা হরতালকে কোনোভাবেই সমর্থন করি না। তাই একটু বেলা করে হলেও কাজে বের হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” 

শাহজাহানপুর এলাকার একটি চা দোকানের মালিক মো. হান্নান হরতালে তার দুরাবস্থার কথা বলেন।

“হরতাল যারা দেয় তারা তো গরিবের কথা চিন্তা করে না। তারপরও গরিব মানুষ কাজে বের হয়। দুপুরে তারা যেন কম দামে খেতে পারে সেইজন্য হরতালেও দোকান খোলা রাখছি।”

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় রোববার প্রথম প্রহরে। এর পরপরই সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে সোমবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের এই বার্তা দেয় একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াত। 

ওই বার্তায় বলা হয়, “বর্তমান স্বৈরাচারী জালেম সরকার এ রকম একজন সৎ, আল্লাহভীরু ও যোগ্য জাতীয় নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করায় জাতি গভীরভাবে শোকাহত ও ক্ষুব্ধ।”

গত চার দলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মুজাহিদ একাত্তরে ছিলেন জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি। সেই হিসেবে পদাধিকার বলে তিনি আল বদর বাহিনীরও নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়েই ওই বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্প তৈরি করে, যেখানে রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের শীর্ষ নেতা মুজাহিদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল সেখানে। ঊর্ধ্বতন সেনা অফিসারের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী নানা অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রও করতেন তিনি। এ ধরনের ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী নিধনসহ গণহত্যার মতো ঘটনা সংঘটিত হয় বলে তার মামলায় বলা হয়।

এর আগে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগে জামায়াতের অন্য সব নেতার রায় ও দণ্ড কার্যকরের পরও হরতাল করেছে দলটি।  একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জামায়াতে ইসলামী মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছিল বলে আদালতের বিচারে উঠে এসেছে।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতায় গতবছর জামায়াতের বিভিন্ন হরতালের সময় সারা দেশে ব্যাপক নাশকতা চালানো হয়। নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণ করতে না পারায় নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় এ দলটি বাংলাদেশে নির্বাচন করারও অযোগ্য।