বিদেশি খুনে ‘জামায়াত সংশ্লিষ্টতা’ দেখছে ভারতের গোয়েন্দারা

বাংলাদেশে সম্প্রতি দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএসের) নাম এলেও দুই ঘটনায় বাংলাদেশেরই রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে ভারতীয় গোয়েন্দারা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2015, 11:09 AM
Updated : 6 Oct 2015, 11:14 AM

মঙ্গলবার টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা ও রংপুরে জাপানি কুনিও হোশির হত্যায় আইএসের জড়িত থাকার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা।

বরং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কয়েকজন নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া এবং আরও কয়েকজনের দণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ায় মরিয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা ভারতের গোয়েন্দাদের।

তারা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতির বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করাটাই হতে পারে নেপথ্যের উদ্দেশ্য।

দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে বিএনপি-জামায়াতকে দিকে ইঙ্গত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ইতোমধ্যে এসেছে।

বিএনপি সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। জামায়াতে ইসলামীও এক বিবৃতিতে বলেছে, সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতেই তাদের দোষারোপ করা হয়েছে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় ইতালির এনজিওকর্মী চেজারে তাভেল্লাকে। সপ্তাহ না পেরোতেই রংপুরে একই কায়দায় খুন করা হয় জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে।

টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে ভারতের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “সামনে জামায়াতে ইসলামীর আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হতে পারে। এদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মতিউর রহমান নিজামীর আপিল শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।

“মনে হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্বের নজর কাড়তেই বিদেশিদের ওপর হামলা হয়েছে। তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আইএসের উপস্থিতি প্রমাণ করাটাও একটা উদ্দেশ্য। জামায়াত নিজেদের জঙ্গিদের দিয়ে এসব কাজ করিয়ে তার দায় আইএসের ওপর চাপানোর চেষ্টা করতে পারে। এর মধ্যে দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হবে এবং হাসিনা সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অকার্যকর, তা প্রমাণ করার চেষ্টা হতে পারে।”

ঢাকায় এই স্থানে খুন হন চেজারে তাভেল্লা

রংপুরে এই স্থানে খুন হন কুনিও হোশি

ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, আইএসের মানুষ হত্যার পদ্ধতির সঙ্গে বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার সঙ্গে মেলে না। শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মানুষ হত্যা এবং সেসব ভিডিও প্রচার করে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভীতি ছড়ানোর জন্য কুখ্যাত আইএস। কিন্তু বাংলাদেশে দুই বিদেশিকে হত্যা করা হয়েছে গুলি করে।

তাভেল্লা হত্যায় কাউকে আটক করা না হলেও কুনিও হত্যাকাণ্ডে বিএনপির দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশের ঘটনার দিকে নজর রাখা ভারতের আরেকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “যাদের আটক করা হয়েছে, তারা হয়ত ঘটনার মূল নায়ক নয়, তবে এখনও অনুসন্ধান চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি, যাতে এসব ঘটনায় আইএসের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হয়।

“এখানে একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে, আর তা হচ্ছে জামায়াত সংশ্লিষ্টতা, যারা হয়ত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নিজেদের শীর্ষনেতাদের বিচারে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদেশি হত্যার মাধ্যমে হাসিনা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়।”

জামায়াতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে শক্ত অবস্থানে থাকা হাসিনা সরকারকে পেছনে ঠেলে দেওয়াটাও একটা উদ্দেশ্য হতে পারে।”