তিন দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের বায়েজিদে ‘কথিত ফকির’ ও যুবলীগ নেতাসহ তিনজনকে হত্যার ঘটনায় এখনও কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেনি পুলিশ।
Published : 07 Sep 2015, 08:49 PM
জোড়া খুনের ঘটনায় ‘সন্দেহজনক’ একজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিলেও যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান বাদল হত্যাকাণ্ডের কোনো ‘ক্লু’ পাচ্ছেন না বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে বায়েজিদ থানার শেরশাহ এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী বলে পরিচিত যুবলীগ নেতা মেহেদীকে।
স্থানীয় ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতার বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় সন্ত্রাস, ভাংচুর ও মারামারির ১৩টি মামলা রয়েছে।
মেহেদী খুনের তিন দিনের মাথায় শুক্রবার বাংলাবাজারের পূর্বাচল এলাকায় কথিত ফকিরের আস্তানায় ঢুকে হত্যা করা হয় ফকির রহমত উল্লাহ ওরফে লেংটা মামু ও তার খাদেম আব্দুল কাদেরকে। ওই দুজনকে গলা কেটে হত্যা করে বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায় খুনি।
মেহেদী হত্যার দুদিন পর ৩ সেপ্টেম্বর রাতে তার স্ত্রী মোবাশ্বেরা বেগম বাদী হয়ে তার স্বামীর প্রতিপক্ষ যুবলীগ-ছাত্রলীগের ২২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। তবে পাঁচ দিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছেন।
“ঘটনার পরপর আসামিদের ধরতে কষ্ট হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা যাবে।।”
এদিকে ‘লেংটা মামা’ ও তার খাদেমকে হত্যার ঘটনায় খাদেম কাদেরের ভাই নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে পরদিন বিকালে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার পর নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ফকিরের সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ আছে কি না অথবা মাজারবিরোধী গোষ্ঠীর কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ওই রাতেই আস্তানা এলাকা থেকে আব্দুল মান্নান ওরফে মনা (৪০) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তা পরিতোষ বলেন, “হত্যাকাণ্ডের কারণ জানতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে।”
হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় খুনিকে স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করলে বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায় সে। এতে বোমার স্লিন্টারে মনির ও মুন্না নামে দুজন আহত হন।
আহত মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, নামাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় তিনি এক যুবককে ছুরি ও একটি ব্যাগ হাতে হেঁটে আসতে দেখেন।
“বিল্ডিংয়ের উপর থেকে লোকজন তখন চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করলে ওই যুবক দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। আমি রাস্তার মধ্যে তাকে জাপটে ধরতে গেলে সে ব্যাগ থেকে বের করে পর পর দুটি বোমা ফাটায়।”
আনুমানিক ২৭ থেকে ২৮ বছর বয়সী ওই যুবকের পরনে প্যান্ট ও লাল গেঞ্জি ছিল বলে জানিয়েছিলেন মনির।
এদিকে আস্তানার ভেতর থেকে লাল-কালো-সবুজ গেঞ্জি উদ্ধার করায় হত্যাকারী যুবক খুন করে গেঞ্জি পাল্টে বেরিয়ে যায় বলে ধারণা পুলিশের।
উপ-কমিশনার পরিতোষ বলেন, “পেশাদার খুনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সেটি আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তবে, গ্রেপ্তার মনাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।”
মনার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলোও হত্যাকাণ্ডের কারণ হতে পারে বলেও জানান তিনি। তবে তদন্তের স্বার্থে সে বিষয়ে কিছু জানাতে অস্বীকার করেন পরিতোষ।