সাকা-মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকরের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2015, 03:35 PM
Updated : 28 August 2015, 04:01 PM

এই দাবিতে শুক্রবার বিকালে শাহবাগে গণঅবস্থান শেষে মিছিল করেন জাগরণ মঞ্চের কর্মীরা।

কর্মসূচিতে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “গত ১৬ জুন আপিল বিভাগ কর্তৃক আলবদর কমান্ডার মুজাহিদের চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হবার প্রায় আড়াই মাস এবং সাকা চৌধুরীর চূড়ান্ত রায়ের প্রায় একমাস হতে চলল, অথচ এখনও পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশিত হয়নি।

“এরপর রিভিউয়ের নাম করে রায় কার্যকরকে আর কতোটা বিলম্বিত করা হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।”

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে চট্টগ্রামের যুদ্ধাপরাধী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে গত ২৯ জুলাই চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে আপিল বিভাগ।

এর আগে ১৬ জুন আপিলের রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালে আল বদর বাহিনীর প্রধান আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।

আপিল বিভাগ থেকে ঘোষিত এ দুটি রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনও প্রকাশিত হয়নি। অনুলিপি প্রকাশের পর রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন দণ্ডিতরা। সেটা খারিজ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ারও সুযোগ রয়েছে।

যত দ্রুত সম্ভব এসব প্রক্রিয়া শেষ করে দুই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি জানিয়ে ইমরান বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে।

“আমরা ইতোমধ্যেই লক্ষ করেছি, এইসব কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের পরিবার এবং বিভিন্ন সংগঠন নানারকম অরাজকতা ও অস্থিরতা করে দেশকে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে চাইছে। এই বিচার প্রক্রিয়া যত দীর্ঘায়িত হবে, দেশবিরোধী এই অপশক্তিরা তত শক্তিসঞ্চয় করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবে।”

যুদ্ধাপরাধের বিচারপ্রক্রিয়ার ‘ধীরগতি’ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এই বিচারকার্য নিয়ে সরকার কতোটা আন্তরিক সে বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। যে গতিতে বিচারিক কর্মকাণ্ড এগোচ্ছে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার এই বিচার প্রক্রিয়াটিকে প্রলম্বিত করে ১০০ বছর কাটিয়ে দিতে চান।

“আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে রাজনীতির কোনো সুযোগ নেই। এখানে কোনোরকম টালবাহানা, কালক্ষেপণ কিংবা রাজনৈতিক কূটকৌশল জনগণ মেনে নেবে না। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, বিচারপ্রক্রিয়ায় গতি সঞ্চার করুন।

“জনগণের মনে যে শঙ্কার জন্ম হয়েছে তা নিরসনের দায়িত্ব আপনাদেরকেই নিতে হবে। দশ বছরের মধ্যে এই বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

‘বিচারপ্রক্রিয়া যত দীর্ঘায়িত হবে, অপরাধীচক্র তাদের ষড়যন্ত্রের জাল তত বিস্তৃত করার সুযোগ পাবে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ইমরান এইচ সরকার।

বিকেল সাড়ে ৪টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।

এসময় মঞ্চের নেতাকর্মীরা যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদেরের মৃত্যুদণ্ডের রায় দ্রুত কার্যকর এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে শ্লোগান দেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে হামলায় নিহত গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের বাবা চিকিৎসক নাজিমউদ্দিন বলেন, “আমাদের কাঁধের উপর অনেক বিচারের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ করে এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইতে গিয়ে আমাদের যেসব সন্তানকে নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে, তাদের খুনিদের বিচারও করতে হবে।”

এ সময় অন্যদের মধ্যে ভাস্কর রাশা, মঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত ও আকরামুল হক বক্তব্য দেন।