গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই বাড্ডায় গুলি করে তিন সরকারসমর্থককে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
Published : 17 Aug 2015, 07:05 PM
তিন খুন: বাড্ডা আ. লীগের নেতাসহ দুইজন গ্রেপ্তার
বাড্ডায় ৩ খুনের পেছনে হাটের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্ব?
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলছেন, এক সময় বাড্ডা এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টের ঝুটের (বাতিল কাপড়) কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন বাউল সুমন নামের একজন। কয়েক বছর আগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে তার মৃত্যু হয়।
এরপর তার সহযোগীদের মধ্যে এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, যাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর (উত্তর) স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গামাও ছিলেন বলে পুলিশের তথ্য।
গত বৃহস্পতিবার রাতে আদর্শনগর পাম্পের কাছে হামলা চালিয়ে গামা, তার সঙ্গে থাকা ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামসু মোল্লা এবং উত্তর বাড্ডার একটি বেসরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ফিরোজ আহমেদ মানিককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর রোববার রাতে বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মো. ফারুক ওরফে মিলন (৪০) এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী নূর মোহাম্মদকে (৩০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. ওবায়দুল হক জানান, ফারুক ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত গুলশান থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বও তিনি পালন করেন। বাড্ডা এলাকাতেই তার বাসা।
আর নূর মোহাম্মদ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
সোমবার তাদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল ‘অন্তত এক সপ্তাহ’ আগে। হামলায় অংশ নেন মোট আটজন, যাদের মধ্যে তিনজনের হাতে পিস্তল ছিল।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ফারুক ও নূর মোহাম্মদ ছাড়াও হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম পুলিশ পেয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
“গ্রেপ্তার দুজন ক্ষমতাসীন দলের হলেও তারা কোনো রাজনৈতিক কারণে এ হত্যায় অংশ নেয়নি। হত্যার নেপথ্যে ছিল আধিপত্য বিস্তার ও পারস্পরিক বিরোধ।”
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্টার গার্মেন্টসসহ বাড্ডার অধিকাংশ গার্মেন্টস থেকে ঝুট সংগ্রহ নিয়ে বিরোধের জেরেই মূলত এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।”
গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া বাকিদের বিষয়েও তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে বলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।
অন্যদের মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (পশ্চিম) মো. সাজ্জাদুর রহমান, উপ কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম, উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ, উপ কমিশনার (পূর্ব) মাহবুব আলম ও উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের পর গ্রেপ্তার ফারুক ও নূর মোহাম্মদকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে দশ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে পুলিশ।
শুনানি শেষে মহানগর হাকিম আতিকুর রহমান তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরির্দশক ফজলুল হক জানান।
আসামি ফারুক ও নূর মোহাম্মদের পক্ষে শুনানিতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
গত বৃহস্পতিবার ওই হত্যাকাণ্ডের পর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গামার বাবা মতিউর রহমান বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হলেও কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।