গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুই রিট আবেদন খারিজ করে স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 05 Aug 2015, 01:40 PM
এই রায়ের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জরুরি অবস্থার সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের করা এই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদার রিট আবেদনে সাত বছর আগে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। সে সময় জারি করা রুল খারিজ করেই বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি আবদুর রবের বেঞ্চ বুধবার এই রায় দেয়।
অভিযোগপত্র দাখিলের পর মামলাটি বর্তমানে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ গঠন পর্যায়ে রয়েছে।
এর ফলে খালেদার বিরুদ্ধে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার বিচার চলতে আর কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, রায়ের অনুলিপি পেলে পর্যালোচনা করে তারা আপিলে যাবেন।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদার বিরুদ্ধে গ্যাটকোসহ তিনটি মামলা হয়। আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে যাওয়ার দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি মামলাগুলো সচল করার উদ্যোগ নেয় দুদক।
এর মধ্যে নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে করা খালেদা জিয়ার আবেদনও ইতোমধ্যে খারিজ হয়ে গেছে। গত ১৮ জুন ওই রায়েও তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
আর বড়পুকরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদনে এর আগে দেওয়া রুলের শুনানিও একই বেঞ্চে চলছে। ১১ অগাস্ট রুল শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।
সাড়ে ১৪ কোটি টাকার ‘দুর্নীতি’
২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর সাবেক চার দলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেঁজগাও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী।
মামলা হওয়ার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।
মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
এর তিন দিন পর খালেদা ও কোকোর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয় হাই কোর্ট। মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। তবে হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।
দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাই কোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়।
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর দুদক মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নেয়। গত ১৯ এপ্রিল রুলের শুনানি শুরুর পর ১৭ জুন বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখে আদালত।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম শামসুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামীও এ মামলার আসামি।
দুই পক্ষের প্রতিক্রিয়া
বিভিন্ন রায় ও উভয়পক্ষের বক্তব্য তুলে ধরে বুধবার আদালতের রায়ে বলা হয়, খালেদা জিয়ার এই রিট আবেদন গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় রুল খারিজ করা হল। আগে দেওয়া স্থগিতাদেশও প্রত্যাহার করা হল।
খালেদা জিয়ার পক্ষে এ সময় আদালতে ছিলেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার এম বদরুদ্দোজা বাদল ও রাগীব রউফ চৌধুরী।
দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আনোয়ারা শাজাহান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াসমিন বেগম বীথি।
রায়ের পর খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একটি রিটে মামলাটি জরুরি বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং অন্যটিতে দুদকের অনুমোদন চ্যালেঞ্জ করা হয়।
“আদালত বলেছে, ফৌজদারি মামলায় রিট আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই রিট আবেদন চলতে পারে না। ফৌজদারি মামলা রিটে চ্যালেঞ্জ করতে হলে আইন চ্যালেঞ্জ করতে হয়, এখানে আইন চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।”
দুদকের এ মামলা অনুমোদন ‘আইনানুগ হয়নি’ বলে যে যুক্তি খালেদার আইনজীবী দিয়েছেন, তাও আদালতে গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে খুরশীদ আলম জানান।
খালেদা জিয়ার এ মামলা চলতে আইনগত আর কোনো বাধা না থাকলেও অন্য আসামিদের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ থাকলে আলাদাভাবে তার নিষ্পত্তি করতে হবে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব বলেন, “আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি। বলা হয় আইনের চোখে সবাই সমান। যখন শেখ হাসিনার মামলা হয়, তখন এক রকম সিদ্ধান্ত হয়, যখন বিরোধীদলের নেত্রীর মামলা হয় তার সিদ্ধান্ত অন্যরকম হয়। একই ধরনের মামলা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।”
রায়ের অনুলিপি পেলে ‘অবশ্যই’ আপিল করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আপিল বিভাগে প্রতিকার পাওয়া যাবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এসব মামলা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলতে পারে না।”