একটি দৈনিকের প্রকাশকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ওই পত্রিকার ‘আক্রমণের মুখে’ থাকা ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের এক নারী চিকিৎসকের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
Published : 02 Aug 2015, 01:24 AM
দৈনিক যুগান্তরের প্রকাশক ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সালমা ইসলামের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে পত্রিকাটি ওই নারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ প্রতিবেদন করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন চিকিৎসক নেতারা।
ডা. নূনজেরুল মোহসেনিন মিম নামে ওই চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে ‘ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার’ হিসেবে কর্মরত, যিনি ‘খুবই কর্তব্যপরায়ণ’ ও ‘কঠোর পরিশ্রমী’ বলে দাবি করেছেন বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান।
নিজের নির্বাচনী এলাকার গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তিকে দেখতে মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে ডা. মিম তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করে আসছেন দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা-১) থেকে নির্বাচিত সাংসদ সালমা।
সালমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওইদিন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের রুমে বসায় ওই চিকিৎসক তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, যাতে তিনি ‘অপমান বোধ’ করেছেন।
যুগান্তর প্রকাশকের দাবি, “এ সময় ওই চিকিৎসক অতর্কিতে এসে আমাকে বলেন, আপনি কেন এখানে বসেছেন, কার অনুমতি নিয়ে বসেছেন। … এতে আমি অপমানিত হয়েছি।”
“এ সময় সেখানে কোনো ভিড় ছিল না। সাংবাদিক, টিভির ক্যামেরাম্যানরা ওই ঘটনা দেখেছেন।”
ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কেন নিজের পত্রিকাকে ব্যবহার করছেন জিজ্ঞেস করা হলে তার পত্রিকা ‘সত্য লিখছে’ বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন সালমা।
“যুগান্তর সব সময় মিথ্যার বিরুদ্ধে। একটা ঘটনা ঘটেছে, এরপর তারা বিষয়টির বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রতিবেদন করছে।”
সালমা বলেন, “যারা আমাকে চেনেন, আমার ব্যবহার সম্পর্কে জানেন। এমনকি সাংবাদিকরাও জানেন পত্রিকারটির সম্পাদক থাকা অবস্থায় আমি কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করিনি।”
“কিন্তু কেউ ওই চিকিৎসক সম্পর্কে ভাল বলেননি। ঘটনার পর সবাই আমাদের বলেছেন, তার ব্যবহার খুব খারাপ; আমরা সেটাই প্রকাশ করছি।”
ডা. মিম ঘটনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি যা বলার তা তার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই বলবেন।
কিন্তু জরুরি বিভাগে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্যাজুয়ালটি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. কেএম রিয়াজ মোরশেদ বলেন, “বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতাল পরিচালকের উপস্থিতিতে মীমাংসা হয়েছিল।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সাংসদ সালমা তার অনুসারীদের নিয়ে ওই রুমে ভিড় জমিয়েছিলেন। আমাদের ওই চিকিৎসক প্রথমে তাকে চিনতে পারেননি। সাংসদ নিজের পরিচয় দিলে তিনি (চিকিৎসক) তাকে অত্যন্ত ভদ্রভাবে পরিচালকের রুমে গিয়ে বসতে অনুরোধ করেন।”
“কিন্তু ওই চিকিৎসক কেন তাকে প্রথমে চিনতে পারেননি এবং কেন তাকে অন্য জায়গায় বসার অনুরোধ করেছিলেন- এই কারণে সাংসদের অনুসারীরা তার উপর ক্ষুব্ধ হয়।”
জরুরি বিভাগ ‘খুবই ব্যস্ত জায়গা’ উল্লেক করে ড. মোরশেদ বলেন, “চিকিৎসকের কাজের ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে আমরা সেখানে কাউকে আসতে দেই না। চিকিৎসকদের সেখানে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয়।”
“এরপরও ডা. মিম সাংসদ সালমার কাছে ঘটনার পরপর দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু তার সঙ্গের লোকজন তাতেও সন্তুষ্ট হননি বলে মনে হয়।”
যুগান্তর এ ঘটনা নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট খবর ছাপছে অভিযোগ করে ক্যাজুয়ালটি বিভাগের সার্জন ডা. মোরশেদ বলেন, “তারা এমনকি ঢাকা মেডিকেল নিয়ে মিথ্যাচার করছে; আমরা নাকি রোগীদের চিকিৎসা সেবা না দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।”
যুগান্তরে প্রকাশিত এসব প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছে। ওই বিবৃতিতে কারো ব্যবহারে সাংসদ কোনোভাবে কষ্ট পেয়ে থাকলে তার জন্য আবারও দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
এদিকে ঘটনার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওই চিকিৎসকে বরখাস্ত করেছেন বলে যুগান্তরে প্রকাশিত খবরের সত্যতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে নাকচ করেন ডা. মোরশেদ।
এটিকে ‘মিথ্যা’ খবর মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ঘটনার পর প্রতিদিন সাংবাদিকরা আসছেন, তাকে ফোন করছেন; যাতে তিনি মানসিকভাবে বিব্রত হচ্ছেন। এ কারণে তাকে আমরা কিছুদিনের ছুটি দিয়েছি।”
ঘটনার পর ওই নারী চিকিৎসকের দুর্ব্যবহারে তার শ্বশুর-শাশুড়ি পর্যন্ত বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন বলে একটি সংবাদের শিরোনাম করে যুগান্তর।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ অবস্থায় তাদের প্রতিবাদ করা ছাড়া অন্য কোন ‘বিকল্প’ নেই।
“আমরা অপেক্ষা করছি, তথ্য সংগ্রহ করছি। আশা করছিলাম বিষয়টি শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এখন আমাদের প্রতিবাদ করতেই হবে।”
প্রথম ধাপে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএমএ একটি মানববন্ধন করবে।
অধ্যাপক আর্সলান বলেন, “ডা. মিম অত্যন্ত দায়িত্বপরায়ণতার সঙ্গে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম ভালভাবে তদারক করেন। তিনি কঠোর পরিশ্রমী। এভাবে মিথ্যা প্রতিবেদন ছাপিয়ে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারবে না তারা।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারা ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন জানিয়ে এই চিকিৎসক নেতা বলেন, “তারা (যুগান্তর) বানানো গল্প প্রচার করছে, তার চরিত্র হরণ করছে। এমনকি তারা হাসপাতালের কোনো মন্তব্য নিচ্ছে না।”
ওই চিকিৎসকে বরখাস্তের খবর প্রত্যাখান করে অধ্যাপক আর্সলানও বলেন, “এ ঘটনায় তাকে বরখাস্ত করার কোনো সুযোগ নেই।”
বিএমএর প্রতিবাদকে মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না যুগান্তর প্রকাশক সালমা ইসলাম। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।”