চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত বহাল রয়েছে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে রয়েছে ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেত।
কক্সবাজার বিমান বন্দরে উঠানামা সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও পণ্য খালাস সীমিত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে তিন নম্বর এলার্ট জারি করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচলও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজগুলোকে বলা হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে।
ঝড়টি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাতিয়া-সন্দ্বীপের উপর দিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহ আলম জানান।
তিনি মধ্যরাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু দুর্বল অবস্থায় রয়েছে, তাই উপকূল পার হতে তিন/চার ঘণ্টা লাগবে।”
শুক্রবার ভোরের আগে এটি স্থলভাগে উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া কর্মকর্তারা। তখন কমে যাবে সঙ্কেত।
ঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বেশ ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূল অতিক্রমের সময় বাতাসের বেগ ৬০-৭০ কিলোমিটার থাকবে বলে জানান শাহ আলম।
ঘূর্ণিঝড়টি কাছাকাছি আসার পর উপকূলে ঝড়ো হাওয়ায় ভেঙে পড়ে বহু গাছ, এতে চাপা পড়ে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে ভোরে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে মোহাম্মদ ইসলাম (৫০) নামে একজন নিহত হন।
দুপুরে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় নুরুল ইসলাম ফকির (৫৫) এবং ভোলার লালমোহন উপজেলায় মনজুরা বিবি (৫৫) নামে দুজনের মৃত্যু হয় গাছচাপা পড়ে।।
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ঝড়ের কবলে পড়ে আট দিনের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে পড়ে শিশুটি।
ভোলার চরফ্যাশনে সাগর উপকূলে তিনটি মাছধরা ট্রলার ডুবে অন্তত ২৪ জেলে নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে।
ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়াসহ সরকার সংশ্লিষ্ট এলাকায় বেশ প্রস্তুতি নিয়েছে।
চট্টগ্রাম, ভোলা, ঝালকাঠী, লক্ষ্মীপুরসহ উপকূলীয় সব জেলাতেই জনগণকে সতর্ক করার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।
উপকূলীয় জেলা বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে আগেই আভাস দেওয়া হয়।
অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি মঙ্গলবার গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। বুধবার রাতে সমুদ্র বন্দরে সতর্কতা সংকেত চার থেকে দ্রুত বাড়িয়ে বিপদ সংকেত (কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ৭ নম্বর এবং মংলা ও পায়রা ৫ নম্বর) দেখিয়ে যেতে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর।