সাকাকে মারতে একাত্তরে অভিযান ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের

যুদ্ধাপরাধের দায়ে চূড়ান্ত রায়েও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে একাত্তরে হত্যার জন্য অভিযান চালিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 03:40 PM
Updated : 29 July 2015, 03:43 PM

একাত্তরের সেপ্টেম্বরে চালানো ওই অভিযানে সালাউদ্দিন কাদের আহত হলেও তার গাড়িচালক নিহত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম, যিনি ছিলেন ওই অভিযানে।

বুধবার আপিলের রায়ের পর তিনি বলেন, সালাউদ্দিন কাদের একাত্তর সালে দেশে ছিলেন না বলে যে দাবি তার আইনজীবীরা করে আসছিলেন, তার অসারতা ওই অভিযানই প্রমাণ করে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালও সন্তুষ্ট হয়নি এই যুদ্ধাপরাধীর আইনজীবীদের যুক্তিতে, যে জন্য প্রাণদণ্ড হয়েছে তার। আপিল বিভাগও সেই রায়ই বহাল রেখেছে।

মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলেকে একাত্তরে রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নূতন চন্দ্র সিংহ, জগৎমল্ল পাড়া ও ঊনসত্তর পাড়ায় গণহত্যা, হাটহাজারীর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজাফফর ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে তুলে নিয়ে হত্যার জন্য ফাঁসিকাষ্ঠে যেতে হচ্ছে।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের রায় ঘোষণার দিন সকাল থেকেই রাউজানের গহিরায় কুণ্ডেশ্বরী ভবনের ফটক বন্ধ রাখা হয়।

চট্টগ্রাম নগরীর গণি বেকারির মোড়ে ‘গুডস হিল’, যা একাত্তরে নির্যাতনের সাক্ষী

যুদ্ধকালে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও চট্টগ্রামে শহরে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সালাউদ্দিন কাদের ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে মুক্তিযোদ্ধারা জানান।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে একাদশ সাক্ষী মাহবুবুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একাত্তরে সাকা চৌধুরী গণহত্যা চালাচ্ছিল। মানুষের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করত গুডস হিলের বাড়িতে।

“একারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিই তাকে হত্যা করার। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে এক সন্ধ্যায় সাকা চৌধুরীর উপর আমরা হামলা করি। তার গাড়িচালক মারা যায়, সে আহত হয়।”

একাত্তরের সেই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন আরেক মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার, ট্রাইব্যুনালে তিনিও সাক্ষ্য দিয়েছেন।

নুরুল আবছার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নগরীর চন্দনপুরা আয়েশা খাতুন লেইনে ডা. ছমিহ উদ্দিনের বাড়িতে এসেছিল সাকা চৌধুরী। ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আমরা হামলা চালাই। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল।”

সেই হামলায় সফল হতে না পারার আক্ষেপ যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজায় ঘুচছে এই দুই মুক্তিযোদ্ধার।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (ফাইল ছবি)

“সেদিন আমরা সফল হতে পারিনি। আজকের চাওয়া হল দ্রুত ফাঁসি কার্যকর করা,” বলেন মাহবুবুল।

একাত্তর সালে সালাউদ্দিন কাদের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন না বলে তার আইনজীবীদের দাবি নাকচ করতে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

“তিনটি ঘটনা একাত্তরে সাকা চৌধুরীর দেশে উপস্থিতি প্রমাণ করে। এগুলো হল নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজাফফর ও তার ছেলেকে হত্যা এবং আমাদের সেই অভিযান।”

মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতনের সাক্ষী গুডস হিলকে অধিগ্রহণ করে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠার দাবিও জানান নুরুল আবছার।