সেই গুডস হিলে সুনসান নীরবতা

একাত্তরে অমানবিক নির্যাতনে যে স্থানটি মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের আর্তনাদে ভারী হয়ে থাকত, আপিলের রায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দণ্ড বহাল থাকার পর চট্টগ্রামের গুডস হিলের সেই বাড়িটি এখন কার্যত নীরব, নিস্তব্ধ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 11:46 AM
Updated : 29 July 2015, 06:38 PM

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছাড়াও তার অপর তিন ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা সেখানে পৃথক ভবনে থাকতেন।

তবে বর্তমানে সেখানে কারা রয়েছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।    

সালাউদ্দিনের যুদ্ধাপরাধের চূড়ান্ত রায়কে ঘিরে বাড়ি এবং এর আশপাশে মাসখানেক আগে অনেকগুলো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। মূল ফটকের সামনেও পুলিশের সশস্ত্র সদস্যদের অবস্থান দেখা গেছে।

গুডস হিলের এক কর্মী জানিয়েছেন, ক্যামেরা বসানোর পর থেকেই ভবনের বাসিন্দারা সারাক্ষণ সিসি ক্যামেরায় সতর্ক চোখ রাখেন।

তবে একাত্তরের ‘টর্চার সেল’ নামে পরিচিত এই বাড়িতে এখন কারা থাকছেন সে ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি দশ বছর ধরে চাকরি করা ওই কর্মচারী।

মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে হত্যা, গণহত্যার চার অভিযোগে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদেরের ফাঁসির রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বুধবার আপিল বিভাগ সর্বোচ্চ সাজা বহাল রেখে রায় দিয়েছে।

সকাল থেকে নগরীর গণি বেকারি সংলগ্ন গুডস হিলে বাসিন্দাদের কাউকে বাইরে আসতে বা ভেতরে ঢুকতে দেখা যায়নি।

পাঁচ বছর ধরে গুডস হিলের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল হাই।

ভেতরে কারা থাকেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভেতরে কেউ নাই। আমরা দেখেশুনে রাখি পুরা বাসভবনটি।”

এতটুকু বলেই সরে যান ওই নিরাপত্তাকর্মী।
 

চট্টগ্রাম নগরীর গণি বেকারির মোড়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসভবন ‘গুডস হিল’ এ একাত্তরে নির্যাতন কেন্দ্র বানানো হয়েছিল বলে নির্যাতিত কয়েকজন জানিয়েছেন। (ফাইল ছবি)

এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাদা রঙের একটি টয়োটা ‘ফিল্ডার’ গাড়ি গুডস হিলে প্রবেশের সময় আটকে দেয় পুলিশ। গাড়িতে চালক ছাড়া কেউ ছিল না। তল্লাশির পর গাড়িটিকে ঢোকার অনুমতি দেয় পুলিশ।

গুডস হিলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোতোয়ালি থানার এসআই মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সকাল ৭টা থেকে আর্মড পুলিশের ২০ জন সদস্যকে নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।

আগে থেকে গুডস হিলের চারপাশে পুলিশের টহল ছিল বলেও জানান তিনি।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে এক যুবক গুডস হিলে ঢুকতে চাইলে দ্বাররক্ষী আটকে দেন।

যুবকটি নিজেকে মো. হাসান পরিচয় দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি এসেছেন কম্পিউটার সিটি থেকে।

গুডস হিলের প্রবেশমুখে থাকা সিসি ক্যামেরাগুলোয় গোলযোগ হওয়ায় সেগুলো মেরামত করতে তাকে পাঠানো হয়েছে বলে জানান হাসান।

গুডস হিলের প্রবেশমুখে আটটি সিসি ক্যামেরা আছে বলে জানান তিনি।

এসময় অনুমতি মেলায় বাড়ির ভেতরে ঢোকেন হাসান। কিছুক্ষণ পরই আসে সংবাদপত্র হকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হকার জানান, গুডস হিলে প্রতিদিন তিনি প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, নিউ এইজ ও চট্টগ্রামের স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকা পৌঁছে দেন।

তবে গুডস হিল এলাকার পাশেই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীদের মালিকানাধীন ‘কিউসি পেট্রোল পাম্পটিতে অন্যদিনের মতো কাজ চলতে দেখা গেছে।