সাকার ফাঁসি আপিল বিভাগেও বহাল

সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সাজা বহাল থাকায় মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে ফাঁসিকাষ্ঠেই যেতে হবে।

সুলাইমান নিলয়মহিউদ্দিন ফারুক ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 03:05 AM
Updated : 30 July 2015, 12:24 PM

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার মাত্র এক মিনিটে রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেন।

এই বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

দুই বছর আগে ট্রাইব্যুনালের রায়ে চার অভিযোগে সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছিল। আপিল আংশিক মঞ্জুর করে আপিল আদালত আটটিতে দণ্ডাদেশ বহাল রেখেছে, একটিতে দেওয়া হয়েছে খালাস।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আদালতের ভেতরে-বাইরে উপস্থিতদের স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। বিদেশি একটি সংবাদ মাধ্যমে এক বিচারপতির সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবারের সাক্ষাতের গুজবের ওপর ভর করে চূড়ান্ত রায় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন অনেকে।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় দেওয়ার পর ওই রায় আগেই ফাঁসের অভিযোগ এনেছিল এই বিএনপি নেতার পরিবার। তদন্তের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাকার স্ত্রী-পুত্র ও আইনজীবী ওই রায়ের খসড়া ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।  

মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর ছেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী যে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে হিন্দু ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক নিধন এবং নির্যাতন শিবির চালিয়েছিলেন, এ মামলার বিচারে তা উঠে আসে।

জীবনভর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও দাম্ভিক মন্তব্যের কারণে বিতর্কিত সাকা চৌধুরীই প্রথম বিএনপি নেতা, যাকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলতে হচ্ছে। আর তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা দ্বিতীয় ব্যক্তি, এ অপরাধে চূড়ান্ত রায়েও যার সর্বোচ্চ সাজার রায় হল।

পাঁচ বছর আগে বিজয় দিবসের ভোরে তখনকার সংসদ সদস্য সাকা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বসেই রেডিওতে নিজের সর্বোচ্চ সাজার রায় শোনেন তিনি।

রায়ের পর সাকা কাশিমপুর কারাগারের জেলারকে বলেন, তিনি ‘ফেলনা’ লোক নন; আইনের ‘সর্বোচ্চ লড়াই’ তিনি লড়বেন।

আসামির আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতের বাইরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, তারা এই রায়ে সন্তুষ্ট নন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলে রিভিউ আবেদন করা হবে।

সাকা চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, “আমার বাবা একজন নির্দোষ ব্যক্তি। আশা করি এই বিষয়টা একদিন না একদিন প্রমাণিত হবে।”

যুদ্ধাপরাধ মামলায় আপিলের চূড়ান্ত রায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় শাহবাগে গণজাগরণ কর্মীদের বিজয় মিছিল। ছবি:নয়ন কুমার

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় বহালের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধারা। বুধবার আপিলের রায়ের আগে হয় এই মিছিল। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

 

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এই রায়ে দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।

ফাঁসির রায় বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত সাজা কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা এবং মামলার সাক্ষীরাও।

একাত্তরে সাকার গুলিতে প্রাণ হারানো নূতন চন্দ্র সিংহের ছেলে প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, “রায় বহাল থাকায় আমরা খুশি হয়েছি। এখন দ্রুত এই রায় কার্যকর দেখতে চাই।”

চট্টগ্রাম শহরে গুডস হিলে নিজের বাড়িকে সাকা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় বানিয়েছিলেন ‘টর্চার সেল’। ওই বাড়িকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে পরিণত করার দাবি জানিয়েছেন নির্যাতিতদের কয়েকজন।

সাকার দল বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, তারা এই রায়ে ‘হতাশ, বিস্মিত ও বেদনাহত’। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

অন্যদিকে সর্বোচ্চ আদালতেও সাকা চৌধুরীর ফাঁসি বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, রিভিউ হলে রায়ে কোনো পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন না।

এ মামলায় প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, তিনি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আপিলের রায়ের পর তিনি বলেছেন, জাতি ‘সুবিচার’ পেয়েছে।

আপিল বিভাগে সাজা বহাল থাকায় যুদ্ধাপরাধীদের ‘চক্রান্তের বিনাশ’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, যিনি এই রায় নিয়ে ‘ষড়যন্ত্রের’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।

দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়ের  লেখা একটি নিবন্ধ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছিল, যাতে একজন বিচারপতির সঙ্গে সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের দেখা করার কথা বলা হয়।

সালাউদ্দিন কাদেরের ফাঁসির রায় ঘোষণার পর আপিল আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ এবং নিবন্ধের লেখক স্বদেশ রায়ের বিরুদ্ধে অবমাননার রুল জারি করে এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকে ইমরান এইচ সরকারের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে বলে।

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের মধ্যে সাকা চৌধুরী হলেন পঞ্চম ব্যক্তি, আপিল বিভাগে যার মামলার নিষ্পত্তি হল।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন প্রিজন ভ্যানে সাকা চৌধুরী।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন প্রিজন ভ্যানে সাকা চৌধুরী।

 

চূড়ান্ত বিচার

আদালত কক্ষে রাখা ঘড়িতে তখন সকাল ৯টা ৩ মিনিট। এজলাসে আসেন বিচারপতিরা।

প্রধান বিচারপতির ডান দিকে রাখা নির্ধারিত আসনে বসেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। বাঁ দিকে ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

আদালত কক্ষে তখন পিন-পতন নিরবতা। 

আসন গ্রহণের পর ৯টা ৪ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। কয়েকটি বাক্যে এক মিনিটের মধ্যে রায় পড়ে শোনান তিনি।

সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়, আপিল আংশিক মঞ্জুর হয়েছে। আপিলকারী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ৭ নম্বর অভিযোগে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ওই অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হল। ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৮, ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ায় তার সাজা বহাল থাকল।

চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের চার অভিযোগে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এক বছর নয় মাস পর আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে, তাতে ৩, ৫, ৬ ও ৮ নম্বর অভিযোগের সবগুলোতেই সর্বোচ্চ সাজা বহাল রাখা হয়েছে।

২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ২০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। তবে ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছরের সাজার ক্ষেত্রে আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে।   

১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগেও ট্রাইব্যুনালের দেওয়া পাঁচ বছর কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়েছে চূড়ান্ত রায়ে।

হরতালে গাড়ি পোড়ানোর একটি মামলায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর সালাউদ্দিন কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ১৯ ডিসেম্বর। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলামসহ মোট ৪১ জন সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তিনি নিজেসহ মোট চারজন।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলে এর ২৮ দিনের মাথায় আপিল করেন সালাউদ্দিন কাদের। চলতি বছর ১৬ জুন থেকে মোট ১৩ দিন দুই পক্ষের যুক্তি শোনে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ। শুনানি শেষে আদালত ২৯ জুলাই রায়ের দিন ধার্য করে

ফাঁসিকাষ্ঠের পথে

নিয়ম অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। সেটি হাতে পেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবে ট্রাইব্যুনাল। সেই মৃত্যু পরোয়ানা ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনাবে কারা কর্তৃপক্ষ।

পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবে আসামিপক্ষ। তবে রিভিউ যে আপিলের সমকক্ষ হবে না, তা যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ‘রিভিউ’ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়েই স্পষ্ট করা হয়েছে।

রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।

যুদ্ধাপরাধ মামলায় আপিলের চূড়ান্ত রায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় চট্টগ্রামের মুন্সিঘাটা এলাকায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের মিষ্টি বিতরণ।

চট্টগ্রাম নগরীর গণি বেকারির মোড়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাসভবন ‘গুডস হিল’।

 

সাকাচৌ

গত দুই দশকে চটকদার,‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ এবং কখনো কখনো ‘অশালীন’ মন্তব্যের কারণে বার বার সংবাদপত্রের শিরোনামে এসেছেন সালাউদ্দিন কাদের, যাকে সংক্ষেপে সাকা চৌধুরী নামে চেনে বাংলাদেশের মানুষ।

তার জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামে। বাবা মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী এক সময় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকারও হয়েছিলেন।

সালাউদ্দিন কাদেরের রাজনীতির শুরুও মুসলিম লীগ থেকেই। পরে জাতীয় পার্টি ও এনডিপি হয়ে তিনি বিএনপিতে আসেন।

একাত্তরের অপরাধের জন্য বিতর্কিত এই রাজনীতিবিদ ১৯৭৯ সালে মুসলিম লীগ থেকে রাউজানের সাংসদ নির্বাচিত হন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়ে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং কার্যত এর মধ্যে দিয়েই মূল ধারার রাজনীতিতে তার পুনর্বাসন ঘটে।

১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির টিকেটে নির্বাচন করে নিজের এলাকা রাউজান থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন সাকা। কিন্তু পরে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে তিনি নির্বাচন করেন নিজের গঠন করা দল এনডিপি থেকে। আবারও তিনি রাউজানের এমপি হন।

এর কিছুদিন পর এনডিপি বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয় এবং ১৯৯৬ সালে বিএনপির টিকেটে সাংসদ নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন। পরের নির্বাচনে ২০০১ সালে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বও তিনি পালন করেন।

এর আগে সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের শাসনামলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, গৃহায়ণ ওগণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সা কা চৌধুরী।

সর্বশেষ ২০০৮ সালের র্নিবাচনে রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি থেকে অংশ নেন সাকা। রাঙ্গুনিয়াতে হেরে গেলেও ফটিকছড়ি, অর্থাৎ চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে বিএনপির সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। তিনি সাংসদ থাকা অবস্থায় ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় আসে।

ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর চার ছেলের মধ্যে সাকা চৌধুরীই সবার বড়। তার সেজ ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তিনিও একসময় সাংসদ ছিলেন।

বাকি দুই ভাইয়ের মধ্যে সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী মারা গেছেন। আর জামাল উদ্দিন কাদের চৌধুরী একজন ব্যবসায়ী।

পঞ্চম রায়

সাকা চৌধুরীর মামলাসহ চূড়ান্ত রায় এসেছে পাঁচ মামলায়। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হলে ওই বছর ১২ ডিসেম্বর দণ্ড কার্যকর করা হয়।

ঠিক এক বছর পর আপিলের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। তবে সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত না হওয়ায় রিভিউ নিষ্পত্তি হয়নি।

২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ তৃতীয় রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ সাজা দিলে ২০১৪ সালের ১১ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

চলতি বছর  ১৬ জুন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায়ই বহাল রাখে আপিল বিভাগ। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে তার দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।