পর্ন তারকাকে ঘুষের মামলা: ট্রাম্পকে মুখ বন্ধ রাখতে আদালতের নির্দেশ

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট, যাকে ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2024, 06:44 AM
Updated : 27 March 2024, 06:44 AM

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে মুখবন্ধ রাখতে ঘুষ প্রদানের মামলার উপর ‘গ্যাগ অর্ডার’ জারি করেছে নিউ ইয়র্কের একটি আদালত। আগামী ১৫ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি দিন।

ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্রাগের অনুরোধে বিচারপতি হুয়ান মারচান মঙ্গলবার ওই ‘গ্যাগ অর্ডার’ জারি করেন বলে জানায় বিবিসি।

ওই মামলার উপর ‘গ্যাগ অর্ডার’ জারির অর্থ হলো, ট্রাম্প বা ট্রাম্প শিবিরের কেউ এই মামলা, মামলা সংশ্লিষ্ট আদালতকর্মী, জুরি, সাক্ষী এবং জেলা অ্যাটর্নি কার্যালয়ের কোনো আইনজীবী বা তাদের পরিবারকে নিয়ে জনসম্মুখে কোনো ধরণের মন্তব্য করতে বা মামলা সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না।

তবে জেলা অ্যাটর্নির উপর আদালতের এই আদেশ প্রযোজ্য নয় বলে কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।

আদালতের এই আদেশ ট্রাম্পের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে ট্রাম্প শিবির থেকে মন্তব্য করা হয়েছে।

এ বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এরই মধ্যে রিপাবলিকান পার্টি থেকে ট্রাম্পের মনোনয়ন বলতে গেলে নিশ্চিত হয়ে গেছে। রিপাবলিকান পার্টি থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা না হলেও ট্রাম্পই তাদের একমাত্র প্রতিযোগী।

‘গ্যাগ অর্ডার’ কে বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মনে কর হলেও অনেক ক্ষেত্রে এ আদেশের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, অনেক সময় মামলা নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন সব মন্তব্য করা হয় যা ‘বস্তুগতভাবে ওই মামলার বিচারকাজে প্রভাব ফেলতে পারে’।

মঙ্গলবার ‘গ্যাগ অর্ডার’ জারির আগের দিনই ট্রাম্প তার ট্রুথ সোস্যাল মিডিয়া একাউন্টে বিচারপতি মারচেনের মেয়েকে আক্রমণ করেন এবং বিচারপতি মারচেনকে ‘প্রত্যয়িত ট্রাম্প বিদ্বেষী’ বলেন।

২০০৬ সালে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে ‘যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন ট্রাম্প’। ড্যানিয়েলস যাতে বিষয়টি নিয়ে মুখ না খোলেন সেজন্যই ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাসখানেক আগে ট্রাম্প তার ওই সময়ের আইনজীবী মাইকেল কোহেনের মাধ্যমে ডেনিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন বলে অভিযোগ ওঠে।

ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়। যে মামলার শুনানিতে আইনজীবী কোহেন তার মক্কেলের হয়ে ড্যানিয়েলসকে অর্থ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

যদিও ট্রাম্প দাবি করেছেন, কোনো ধরনের অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। তাকে রাজনীতির মাঠে কাবু করতে এই মামলা করা হয়েছে।

ট্রাম্প নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও আদালত স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গোপনে অর্থ দেওয়ার মামলায় তাকে অভিযুক্ত করে। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট, যাকে ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে হয়।

মঙ্গলবারের আদেশে বিচারপতি মারচেন বলেন, সাংবিধানিকভাবে ট্রাম্পের বাকস্বাধীনতার অধিকারের বিষয়ে তিনি সচেতন।

কিন্তু ট্রাম্প এর আগে তার বিরুদ্ধে হওয়া অন্যান্য মামলার সাক্ষী, আইনজীবী ও বিচারকদের নিয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন।

“তার ওইসব বক্তব্য হুমকি প্রদান, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী এবং নিন্দনীয় ছিল।

“এই ধরনের উস্কানিমূলক বিচারবহির্ভূত বিবৃতি নিঃসন্দেহে এই আদালতের সুশৃঙ্খল প্রশাসনকে বাধাগ্রস্ত করবে।”

বিবিসি জানায়, আদালতের কাছে ‘গ্যাগ অর্ডার’ চেয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে আবেদন করনে অ্যাটর্নি ব্রাগ। আবেদনে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্টের প্রতিপক্ষকে আক্রমণের ‘দীর্ঘ এবং অনন্য ইতিহাস’ এর উল্লেখ করেন।

বিপরিতে আদলতে ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেন, যেহেতু তিনি ‘রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সামনের সারির প্রার্থী’। তাই তার ‘বক্তব্য প্রদানের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা ‘অসাংবিধানিক ও বেআইনি’ হবে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘গ্যাগ অর্ডার’ অবশ্য এবারই প্রথম নয়। কারণ, তিনি প্রতিনিয়ত তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার অ্যাটর্নি এবং আদালতকর্মীদের আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন

Also Read: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত

Also Read: পর্নো তারকাকে দেওয়া অর্থ আইনজীবীকে পরিশোধ করেছিলেন ট্রাম্প