চীনের হুমকির মধ্যে তাইওয়ানের নতুন ইংরেজি টিভি চ্যানেল

প্রথম ইংরেজি ভাষার ২৪ ঘণ্টার টিভি চ্যানেল ‘তাইওয়ানপ্লাস’ এর উদ্বোধন করেছেন প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2022, 12:31 PM
Updated : 3 Oct 2022, 12:31 PM

তাইওয়ান এই প্রথম ইংরেজি-ভাষার সংবাদ, জীবনধারা এবং বিনোদন বিষয়ক টিভি চ্যানেল চালু করেছে।

চীন যখন পদে পদে তাইওয়ানকে নিস্পেষিত করে নিজেদের সার্বভৌমত্ব জাহির করতে চাইছে, ঠিক তখনই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও সরব উপস্থিতির জন্য দ্বীপদেশটির এ উদ্যোগ।

সোমবার ইংরেজি ভাষার ২৪ ঘণ্টার টিভি চ্যানেল ‘তাইওয়ানপ্লাস’ এর উদ্বোধন করেছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমাদের মূল্যবোধ, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টায় এই টিভি চ্যানেল তাইওয়ানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে আসবে।”

“আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের প্রচার-প্রসারে টিভি চ্যানেলটি সহায়ক হবে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।”

সরকার-সমর্থিত তাইওয়ানপ্লাস মূলত অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ শুরু করেছিল গত বছরই। প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন এ টিভি চানেলকে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছেন।

চ্যানেলটির উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, “তাইওয়ানের কাহিনী বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে শেয়ার করা উচিত। বিশ্বব্যাপী আরও বেশি বেশি মানুষ তাইওয়ানের বিষয়ে জানতে আগ্রহী হচ্ছে। তাই অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাইওয়ানকে তুলে ধরতে আমাদের একটি প্ল্যাটফর্ম থাকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

বেইজিং-তাইপের বিরোধের কেন্দ্রে অবস্থান করছে তাইওয়ান নিয়ে চীন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। চীন তাইওয়ানকে একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে এবং শক্তি প্রয়োগ করে হলেও কোনও না কোনওদিন এই দ্বীপদেশটিকে দখলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে।

অন্যদিকে, তাইওয়ানের অনেক নাগরিকই স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হোক বা না হোক তাদের স্বশাসিত দ্বীপটিকে পৃথক দেশ মনে করে।

কিন্তু সম্প্রতি কয়েক বছরে চীন তাইওয়ানের ওপর কূটনৈতিক এবং সামরিক চাপ বাড়িয়েছে। ওদিকে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও চীন প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। নিজেদের ইংরেজি-ভাষার গণমাধ্যমে দিন দিনই আরও বেশি সক্রিয় হচ্ছে চীন।

ইংরেজি ভাষার চীনা গ্লোবাল টিভি নেটওয়ার্ক ‘সিজিটিএন’ এর মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তর অঙ্গনে তারা তুলে ধরছে তাদের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি।

ওদিকে, তাইওয়ানকে গণতান্ত্রিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চাইছে চীন। তাইওয়ানে বিদেশি রাজনীতিবিদদের সফরের বিরুদ্ধেও চীন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।

সম্প্রতি গত অগাস্ট মাসে তাইওয়ানে মার্কিন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে তাইওয়ান প্রণালীর কাছে সামরিক মহড়া চালিয়েছে চীন।

তাইওয়ানের নতুন ইংরেজি-ভাষার টিভি চ্যানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের এ হুমকি নিয়ে সাংবাদিকদেরকে তাইওয়ানের প্রধানমন্ত্রী সু-সেং চ্যাং বলেছেন, “আমাদের এক অশুভ প্রতিবেশী দেশ আছে, যারা অনবরতই আমাদের ওপর শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে…তবে আমরা এতে ভয় পাই না, জীবন স্বাভাবিকভাবেই চলছে।

“স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। বিশ্বে আমাদের বন্ধুরা জানতে চায় তাইওয়ান কি করে এটি করল। আর তাইওয়ানও বিশ্বকে তা জানতে দিতে চায়।”

ওদিকে, তাইওয়ানের সংস্কৃতি মন্ত্রী লি ইয়ং-তে সাংবাদিকদের বলেছেন, চীন এই দ্বীপদেশ সম্পর্কে যা বলে থাকে সেটি মোকাবেলা করতে তাইওয়ানের সক্ষম হওয়া দরকার এবং তাইওয়ানের দৃষ্টিভঙ্গি বহির্বিশ্বে তুলে ধরা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, তাইওয়ানপ্লাস টিভি চ্যানেল ছয় মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যাবে বলে সরকার আশা করছে।