আক্রান্ত হলে ফিলিপিন্সকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লিনকেন

ফিলিপিন্স সফরের সময় এক সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের ৭০ বছরের পুরাতন প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই চু্ক্তি ‘লৌহকঠিন’।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2022, 02:43 PM
Updated : 7 August 2022, 02:43 PM

দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপিন্স আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে রক্ষা করবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

ফিলিপিন্স সফরের সময় শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের ৭০ বছরের পুরাতন প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই চু্ক্তি ‘লৌহকঠিন’।

‘‘ফিলিপিন্সের সশস্ত্রবাহিনী, সরকারি জাহাজ এবং উড়োজাহাজ যদি সশস্ত্র আক্রমণের শিকার হয় ওই চুক্তির ‍অধিনে যুক্তরাষ্ট্র পারষ্পরিক যে প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেটাকে আহ্বান জানানো হবে।

‘‘ফিলিপিন্স যুক্তরাষ্ট্রের অপরিবর্তনযোগ্য বন্ধু, অংশীদার এবং মিত্র।”

সম্প্রতি আবারও ফিলিপিন্সের ক্ষামতায় এসেছে সাবেক স্বৈরশাসক ফের্দিনান্দ মার্কোসের পরিবার। তিন দশক আগে গণবিক্ষোভের মাধ্যমে যিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। গত মে মাসের নির্বাচনে জিতে এবার দেশটির প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ফের্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র। যিনি বংবং নামেই অধিক পরিচিত।

প্রায় দুই দশক ধরে ফিলিপিন্স শাসন করা ফের্দিনান্দোর বিরুদ্ধে ১৯৮৬ সালে যখন গণবিক্ষোভ তুঙ্গে তখন তাকে হাওয়াই পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল ওয়াশিংটন।

মার্কোস জুনিয়র প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ব্লিনকেনই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা যিনি ফিলিপিন্স সফরে যান।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ঘিরে ওই অঞ্চলে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ব্লিনকেনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়রের আলোচনায় সেই বিষয়টি প্রধান্য পায়।

ব্লিনকেনের সঙ্গে আলোচনার শুরুতেই মার্কোস জুনিয়র তাইওয়ান ঘিরে যে কূটনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করার কথা বলেন। তিনি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন পেলোসির ভ্রমণের কারণে ‘ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়েনি’। বরং সেখানে আগে থেকেই অস্থির অবস্থা বিরাজ করছিল।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ফিলিপিন্সের অবস্থান। মার্কোস জুনিয়রকে এই দুই পরাশক্তির সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

বর্তমানে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব প্রায় অপ্রতিরোধ্য জায়গায় চলে গেছে। তাই ওই অঞ্চলে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার এবং চীনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য দেশের অভ্যন্তরে মার্কোস জুনিয়রের উপর চাপ রয়েছে বলে জানায় সিএনএন।

মার্কোস জুনিয়রের পূর্বসুরি সাবেক প্রেসিডেন্ট রদরিগো দুর্তেতেও চীন ঘেঁষা ছিলেন। তার সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী মন্তব্য এবং হুমকি দুই দেশের পারষ্পরিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে।

চীনের সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র এখন হয়তো ফিলিপিন্সের সঙ্গে পুরাতন সম্পর্ক চাঙ্গা করতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কোস জুনিয়রকে। জানান ফিলিপিন্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনরিক মানালো একথা বলেছেন।

মার্কোস জুনিয়র এক দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র যাননি। মূলত তার বিরুদ্ধে হাওয়াইয়ের একটি আদালতকে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করার জেরে আদালত অবমাননার অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯৫ সালে হাওয়াইয়ের একটি আদালত মার্কোস পরিবারকে ফের্দিনান্দ মার্কোসের শাসনামলে নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের ২০০ কোটি মার্কিন ডলার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

ওই আদেশে মার্কোস জুনিয়র এবং তার মা ইমেলদা মার্কোসকেও ৩৫ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়।

এখন মার্কোস জুনিয়রকে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে ম্যানিলায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে বলা হয়, রাষ্ট্রপ্রধানরা কূটনৈতিক প্রতিরোধের আওতায় থাকেন।