ভারতীয় বংশোদ্ভূত যে সিইও হতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট

চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার ঘোষণা দেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত রামাস্বামী।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2023, 10:49 AM
Updated : 2 March 2023, 10:49 AM

পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন পেতে যে তিনজন এরই মধ্যে দৌড়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তাদের দুজনই ভারতীয়-আমেরিকান। এ দুইয়ের মধ্যে নিকি হ্যালি বেশ পরিচিত, সেই তুলনায় আরেক ভারতীয় বংশোদ্ভুত বিবেক রামাস্বামীকে খুব কম লোকই চেনেন।

বিবিসি জানিয়েছে, কোটিপতি উদ্যোক্তা, ‘ওক, ইনক. ইনসাইড করপোরেট আমেরিকাস সোশ্যাল জাস্টিস স্ক্যাম’ বইয়ের লেখক রামাস্বামী গত ২১ ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজের এক শোতে হাজির হয়ে ও নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শসম্বলিত একটি ভিডিও ছেড়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে নামার ঘোষণা দেন।

‘শ্রেষ্ঠত্বের সাধনার’ ও পর ভিত্তি করে নতুন আমেরিকান স্বপ্ন বিনির্মাণে একটি সাংস্কৃতি আন্দোলন গড়ে তুলতে চাওয়া রামাস্বামী বলেছেন, মানুষে মানুষে বন্ধন সৃষ্টি করতে পারে এমন মহৎ কিছু না থাকলে বৈচিত্র্য অর্থহীন।

৩৭ বছর বয়সী এ রিপাবলিকান জন্মেছেন ওহাইওতে; তার পড়ালেখা হার্ভার্ড ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে। জৈবপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে লাখ লাখ ডলার উপার্জন করে পরে ‍একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠন গড়ে তোলেন তিনি।

করপোরেট জগতে বর্ণবৈষম্য ও জলবায়ু সংক্রান্ত যে স্পর্শকাতরতা রয়েছে, তা নিয়ে তার আপত্তির বিষয়টি জোর গলাতেই বলে আসছেন তিনি; এই স্পর্শকাতরতা ব্যবসা ও দেশ উভয়েরই ক্ষতি করছে বলেও মনে করেন তিনি। কোনো একটি কোম্পানির সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব মাপার যে ইএসজি উদ্যোগ, তিনি তার বিরোধী।

উচ্চশিক্ষার বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমাতে চান রামাস্বামী।

তার মতো আরও কিছু রিপাবলিকানের মধ্যেও একই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যাচ্ছে।

২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে মার্কিন সেনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা রিপাবলিকান বিক্রম মনসারমনি বলছেন, তার কাছে রামাস্বামীকে ‘খুবই চিত্তাকর্ষক, স্পষ্টবাদী এবং চিন্তাশীল’ বলে মনে হয়।

তাদের দুজনেরই লক্ষ্য হল ‘আমেরিকাকে বিভক্ত না করে ঐক্যবদ্ধ করা’।

সম্প্রতি রামাস্বামী নিউ হ্যাম্পশায়ার গেলে সেখানে মনসারমনির সঙ্গে দেখাও হয় তার।

“জাতি-পরিচয়ের রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্রে শেকড় গেড়েছে এবং এটি দেশকে ঐক্যবদ্ধ বা সংগঠিত করার প্রবণতার পরিবর্তে বিভাজনের প্রবণতা তৈরি করেছে। আমাদের মধ্যে যা কমন, তার ওপর ভিত্তি করেই দেশ গড়ে তোলা উচিত,“ বলেছেন মনসারমনি, যার পরিবার সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দেওয়া আরেক ভারতীয়-আমেরিকান নিকি হ্যালির জন্যও এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।

রাজনৈতিক বিভাজনের অপর অংশেও অনেক ভারতীয় বংশোদ্ভূত রয়েছেন, যারা রামাস্বামীর নীতির সঙ্গে একমত নন। তাদের কথায়, রামাস্বামীর প্রচারণায় গভীরতা কম।

ডেমোক্র্যাট শেখর নরসিমহান এশিয়ান আমেরিকানস অ্যান্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ডারস (এএপিআই) ভিক্টরি ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এশীয় বংশোদ্ভূত অনেক আমেরিকানের প্রভাব বাড়ায় তিনি খুশি হলেও রামাস্বামীর চিন্তা-ভাবনায় তিনি আস্থা রাখতে পারছেন না।

“তিনি একজন ব্যবসায়ী, তার নামে কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু তার প্রতিশ্রুতিগুলো আসলে কী? তিনি কি বয়স্কদের চিকিৎসার খবর নেন?  অবকাঠামো ব্যয় নিয়ে তার পরিকল্পনা কী? তার নির্দিষ্ট কোনো অবস্থান নেই। এখন পর্যন্ত তিনি তার নীতিগুলো স্পষ্ট করতে পারেননি।”

রামাস্বামীর প্রচারাভিযানকে ‘ভাববিলাসী’ বলে অভিহিত করেন নরসিমহান। তার ইঙ্গিত, রামস্বামী হয়তো বিশ্বাস করেন তার কিছু বলার আছে এবং প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করলে তার কথা লোকজন শুনবে।

বছরের পর বছর ধরে ভারতীয়-আমেরিকান কমিউনিটির সদস্য যারা রিপাবলিকানদের সমর্থন দিয়ে আসছেন, তাদের অনেকে বলছেন, রামাস্বামী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতার ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার নামও তারা কেউ শোনেননি।

“রামাস্বামীর সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি। আমাকে বলা হয়েছে, তার টাকা আছে, বলেন ভালো। কিন্তু তিনি হলে অনেক প্রার্থীর একজন হবেন। তার খুব বেশি সুযোগ দেখছি না,” বলেছেন সুপরিচিত রিপাবলিকান সমর্থক ও চাঁদা উত্তোলনকারী ড. সম্পত শিবাঙ্গি। 

অনেকেই তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত।

“রামাস্বামী যদি আগেই নির্বাচনে নামার ঘোষণা না দিতেন, তবে কেউ হয়ত তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাও করতো না”, বলেন হোটেল ব্যবসায়ী ড্যানি গায়কোয়াড, যিনি জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় থেকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করে আসছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেওয়া রামাস্বামীর সাহসের প্রশংসা করলেও গায়কোয়াড বলেছেন, তার (রামাস্বামী) একটি কৌশল থাকা দরকার, যেখানে ‘ভারতীয়-আমেরিকানদের জন্য কিছু আছে’।

তিনি আরও বলেন, দলীয় মনোয়ন কে পাবে, তা এত তাড়াতাড়ি বোঝাও যাবে না। কেবল ফ্লোরিডা থেকেই দুজন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন, যাদের একজন গভর্নর রন ডিসান্টিস, আরেকজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডিসান্টিস অবশ্য এখনও হোয়াইট হাউসে যাওয়ার দৌড়ে নামার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি।

ভারতীয়-আমেরিকান অনেক রিপাবলিকানেরই ধারণা, প্রার্থীতার দৌড়ে মূলত তিনজনই থাকবেন- ট্রাম্প, হ্যালি ও ডিসান্টিস। সাবেক প্রেসিডেন্টের আইনি লড়াই কোথায় গিয়ে গড়াবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় এখনই কারও পক্ষে চলে যাওয়ার চেয়ে অপেক্ষা করাকেই শ্রেয়তর মনে করছেন তারা।

শিবাঙ্গি যেমন বলছেন, তিনি হ্যালির আক্রমণাত্মক প্রচারাভিযান কৌশলের অনুরাগী; ট্রাম্প যদি ট্রাম্প প্রার্থীতার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন, তাহলে হ্যালিকেই সমর্থন দেবেন তিনি।

“ট্রাম্পের রেটিং ৪০%, আর হ্যালির রেটিং এক অঙ্কের ঘরে। তবুও হ্যালি আমাদের প্রার্থী। আমরা তার ঘনিষ্ঠ, তার মূল কারণ তিনি ভারতীয়- আমেরিকান।”

রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও, গত এক যুগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ভারতীয়-আমেরিকানদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়ে যাওয়ায় খুশি ওই কমিউনিটির সদস্যরা। রাজনীতিতে নিজেদের সম্প্রদায়ের একজনের উত্থানে বেশ খুশিও তারা।

“একটি দারুণ জিনিস হচ্ছে, ভারতীয়-আমেরিকানরা সামনের সারিতে আসছে”, বলেন গায়কোয়াড।

রামাস্বামী নির্বাচনে নামার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার মধ্য দিয়ে এমনকি স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও ‍ভারতীয়-আমেরিকানরা ভোটে লড়তে উৎসাহ পাবে।

একই কথা বলছেন ভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে থাকারাও।

“যদি আমাদের বাচ্চারা দেখে যে, রামস্বামী নামের আমেরিকানরা দৌড়ে নেমেছে, একজন খান্না বা একজন কৃষ্ণমূর্তি নির্বাচনে জিততে পারেন, তাহলে সেটা হবে বেশ ভালো ব্যাপার”, বলেন নরসিমহান।