অবৈধ সুবিধা চেয়েছিলেন ইমরান খান, দাবি আইএসআই প্রধানের

তেহরিক-ই-ইনসাফের এক নেতা আসাদ উমর পরে আইএসআই প্রধানের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2022, 05:54 AM
Updated : 28 Oct 2022, 05:54 AM

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার সরকারের জন্য সামরিক বাহিনীর কাছে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ সুবিধা চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির গুপ্তচরপ্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল নাদিম আনজুম।

বৃহস্পতিবার নজিরবিহীন ও বিরল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

চলতি বছরের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ইমরান দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তোপ দেগে আসছেন। তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বিরোধীদের বসাতে সামরিক বাহিনী ছক কষেছিল বলেও অভিযোগ তার।

সাম্প্রতিক সময়ে তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধানের সমালোচনার মাত্রা আরও বাড়ছিল। এরই প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার দেশটির সামরিক বাহিনীর ভেতরেও প্রভাবশালী ইন্টার-সার্ভিস ইন্টিলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান নাদিম আনজুম সংবাদ সম্মেলনে আসেন।

তিনি বলেন, “ইমরান খানের সমালোচনার কারণ হচ্ছে সামরিক বাহিনী ও এর প্রধান অবৈধ এবং অসাংবিধানিক কাজ করতে রাজি হননি।”

সামরিক বাহিনী রাজনীতি থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যে কারণে তারা ইমরানের একের পর এক অনুরোধে সাড়া দেয়নি, বলেছেন আনজুম।

অভিযোগ করলেও ইমরান কী কী সুবিধা চেয়েছিলেন, তা বলেননি তিনি।

আইএসআই প্রধানরা সাধারণত একটু আড়ালেই থাকেন, সংবাদ সম্মেলন তো দূর জনসমক্ষেই তাদের খুব একটা দেখা যায় না।

ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের এক নেতা আসাদ উমর পরে আইএসআই প্রধানের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, সামরিক বাহিনীর কাছে কোনো ধরনের অবৈধ সুবিধা চাওয়া হয়নি। 

সামরিক বাহিনীকে পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করা হয়। স্বাধীনতা লাভের পর দেশটি যে সাড়ে সাত দশক পার করেছে, তার তিন দশকেরও বেশি সময় তাদেরকে সামরিক শাসনেই থাকতে হয়েছে।

এমনকি বেসামরিকরা যখন দায়িত্বে থাকে, তখনও পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি সামরিক বাহিনীর করতলেই থাকে।

২০১৮ সালে ইমরানকে ক্ষমতায় বসানোর ক্ষেত্রেও সামরিক বাহিনীরও ভূমিকা ছিল বলে মত অনেক বিশ্লেষকের। তবে শেষ পর্যন্ত তাতে ফাটল ধরে।

সংবাদ সম্মেলনে আনজুম সেনাবাহিনী অতীতে অনেক ভুল করেছে বলে স্বীকারও করে নেন। বলেন, সম্প্রতি তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই রাজনীতি থেকে দূরে থাকার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এ বছরের এপ্রিলে বিরোধীদের জোট পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান এরপর থেকেই দেশে আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। শুক্রবার লাহোর থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত লংমার্চের কর্মসূচিও রয়েছে তার। 

পাকিস্তানের বর্তমান সরকার আগাম নির্বাচনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, আগামী বছরের অক্টোবরে যথাসময়েই দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আনজুমের পাশে থাকা সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেনেন্ট জেনারেল বাবর ইফতেখার বলেন, সামরিক বাহিনীকে কলঙ্কিত করতে যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তার জবাব দিতেই গুপ্তচরপ্রধান নজিরবিহীনভাবে জনসমক্ষে এসেছেন।

আনজুম জানান, উত্তেজনা কমাতে সম্প্রতি ইমরান ও সেনাবাহিনী প্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া একে অপরের সঙ্গে দেখাও করেছেন।

তিনি বলেন, মার্চে ইমরানের সরকারের ওপর বিরোধীদের চাপ যখন তীব্র, সেসময় তখনকার প্রধানমন্ত্রী বাজওয়াকে ‘আজীবন সেনাপ্রধান’ পদে রেখে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যদিও তা প্রত্যাখ্যাত হয়।

এ ধরনের কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে রয়টার্স ইমরানের সহযোগী ফাওয়াদ চৌধুরীর মন্তব্য চাইলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।