ইউক্রেইনে ৫ মাসে ২০ হাজারের বেশি রুশ সেনা নিহত, দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

এই সময়ের মধ্যে ইউক্রেইনের হতাহত কত, তা বলতে রাজি হননি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2023, 06:27 AM
Updated : 2 May 2023, 06:27 AM

ইউক্রেইনে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ৫ মাসে ২০ হাজারের বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে অনুমান করছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই সময়ের মধ্যে রাশিয়ার আরও ৮০ হাজার সেনা আহত হয়েছে বলেও গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি।

তিনি বলেন, নিহত রুশ সেনাদের মধ্যে অর্ধেকই ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের; এই বাহিনীই পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুত শহর দখলে নিতে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউক্রেইনের অন্যান্য ফ্রন্ট তুলনামূলক শান্ত থাকলেও গত বছরের শেষ দিক থেকে রাশিয়া মূলত বাখমুত দখলে নিতেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ছোট এই শহরটির সিংহভাগ অংশই এখন মস্কোর নিয়ন্ত্রণে, তবে ইউক্রেইনীয় বাহিনী এখনও শহরটির পশ্চিমের সামান্য অংশ দখলে রেখেছে। শহরটিকে ঘিরে চলা লড়াই দুই পক্ষের জন্যই মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা বলছেন, বাখমুতে তারা যত বেশি সংখ্যক রুশ সেনাকে মারা যায়, সেই চেষ্টা করার পাশাপাশি রাশিয়ার রিজার্ভে থাকা সেনার পরিমাণও কমিয়ে আনতে চাইছেন।

“বাখমুতের মাধ্যমে দনবাসে রাশিয়ার সেনা অভিযানে মোটাদাগে ব্যর্থ হয়েছে। তারা কোনো বাস্তব কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দখল নিতে পারেনি।

“আমাদের অনুমান, রাশিয়ার হতাহত সেনার সংখ্যা লাখখানেকের বেশি, এর মধ্যে যুদ্ধে নিহতই ছাড়িয়েছে ২০ হাজার,” বলেছেন কারবি।

যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা ৫ মাসে ইউক্রেইনের কী পরিমাণ হতাহত হয়েছে, তা বলতে রাজি হননি। রুশপন্থি বিভিন্ন টেলিগ্রাম চ্যানেলে গত কয়েক মাসের যুদ্ধে এক ‍রুশ সেনার বিপরীতে ইউক্রেইনের ৫ থেকে ৭ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

“এখানে ইউক্রেইনীয়রা ভিকটিম, রুশরা আগ্রাসক,” ইউক্রেইনের হতাহতের সংখ্যা না বলার এমন কারণই দেন কারবি।

“মোদ্দা কথা হচ্ছে, কয়েক মাসের লড়াই ও নজিরবিহীন ক্ষয়ক্ষতিতে রাশিয়ার আক্রমণ ব্যাকফায়ার করেছে,” বলেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। মস্কো ওয়াশিংটনের ভাষ্য নিয়ে মন্তব্যও করেনি।

সমর বিশ্লেষকরা বলছেন, বাখমুতের দখল পেলে রাশিয়া দোনেৎস্কের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পথে অনেকখানিই এগিয়ে যাবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইউক্রেইনের যে চারটি অঞ্চল রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ভূখণ্ডভুক্ত করেছে, দোনেৎস্ক তার একটি।

মস্কোপন্থি প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গণভোটের রায় পক্ষে যাওয়ার পর রাশিয়া ওই চারটি অঞ্চলকে ভূখণ্ডভুক্ত করে। ইউক্রেইনের মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো ওই গণভোটকে অবৈধ অ্যাখ্যা দিয়েছে।

পশ্চিমা অনেক বিশ্লেষকের মতে, বাখমুতের কৌশলগত গুরুত্ব খুব একটা নেই, কিন্তু ক্রেমলিনে সুখবর পাঠাতে হিমশিম খাওয়া রাশিয়ার যুদ্ধ কমান্ডাররা এখন এটির দখল নিতেই মরিয়া।

রাশিয়ার যে ভাড়াটে বাহিনী সেখানে যুদ্ধ করছে, সেই ওয়াগনার গ্রুপের বেশিরভাগ যোদ্ধাই মূলত দাগী আসামী। এই বাহিনীর নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের ভাবমূর্তিও বাখমুতের যুদ্ধের উপরই নির্ভর করছে।

প্রিগোজিন সম্প্রতি বাখমুত থেকে তার বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।

রাশিয়ার এক সুপরিচিত ব্লগারকে দেওয়া বিশদ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে চাহিদা অনুযায়ী গোলাবারুদ না দিলে তিনি তার সেনাদের বাখমুত থেকে সরিয়ে মালিতে নিয়ে যেতে পারেন।

গোলাবারুদের ঘাটতি নিয়ে প্রিগোজিনকে এর আগেও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়াতে দেখা গেছে।

ইউক্রেইন শিগগিরই রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে নামার ঘোষণা দিয়েছে, তার আগে রুশ জনগণকে ‘সব ঠিক আছে’ এমন বুঝ দেওয়ারও ঘোরবিরোধী ওয়াগনারপ্রধান।

সোমবার ইউক্রেইনের এক শীর্ষস্থানীয় জেনারেল বলেছেন, পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে বাখমুতের কিছু এলাকা থেকে রুশ সেনাকে সরিয়ে দেওয়া গেলেও পরিস্থিতি এখনও ‘খুব জটিল’।

“ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও ছত্রীসেনা, ওয়াগনার যোদ্ধাসহ নতুন নতুন রুশ ইউনিট নিয়মিত সেখানে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু শত্রুরা এখনও শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি,” টেলিগ্রামে এমনটাই বলেছেন ইউক্রেইনের স্থলবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল ওলেকসান্দার সিরস্কিয়ি।