হোস্টেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল, সন্দেহ নিউ জিল্যান্ড পুলিশের

দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স একে ‘নিদারুণ ট্র্যাজেডি’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2023, 12:19 PM
Updated : 17 May 2023, 12:19 PM

নিউ জিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে একটি হোস্টেলে ছয়জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া আগুন কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে লাগিয়েছে সন্দেহ করে সে অনুযায়ী তদন্ত শুরু করেছে দেশটির পুলিশ।

ওই আগুনের ঘটনায় এখনও ২০ জন নিখোঁজ; একে অগ্নিসংযোগ হিসেবেই দেখা হচ্ছে বলে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।

চারতলা লোফার্স লজ হোস্টেলে আগুন ছড়িয়ে পড়লে প্রাণ বাঁচতে সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই ছাদে ছুটে যেতে বাধ্য হন; কেউ কেউ জানালা দিয়ে নিচেও লাফ দেন।

ভবনটির ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে; যে কারণে পুলিশ এখনও নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি।

নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে জানিয়ে বুধবার তারা বলেছে, হোস্টেল ভবনটির অবস্থা মূল্যায়নের পর সেখানে তদন্তকারীদের একটি দলকে পাঠানো হয়েছে।

“আগুনে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের শনাক্ত ও মৃতদেহ উদ্ধারে কর্মকর্তারা কাজ করে যাবে। আমরা জানি, পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের খবরের জন্য অনেক মানুষ অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে হোস্টেলটির বাসিন্দারাও আছেন, যারা আগুনের হাত থেকে বাঁচতে পেরেছিলেন, তারাও অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের খবর জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন,” সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন ওয়েলিংটনের ভারপ্রাপ্ত জেলা কমান্ডার ডিওন বেনেট।

এখন পর্যন্ত ৯০ জনের বেশি মানুষের খোঁজ মিলেছে। নিখোঁজ ও মৃতদের পরিচয় প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ।

অন্যান্য কারণেও অনেকের খোঁজ নাও মিলতে পারে, বলছে তারা।

ওয়েলিংটনের উপকণ্ঠে হোস্টেলে এই অগ্নিকাণ্ড পুরো নিউ জিল্যান্ডকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স একে ‘নিদারুণ ট্র্যাজেডি’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই ঘটনা দেশের গৃহায়ন সংকট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সামনে নিয়ে আসবে।

৯২ কক্ষের লোফার্জ লজ হোস্টেলটি ভাতা ও প্রতিবন্ধী পেনশনে চলাসহ ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক লোকজনের থাকার জায়গা হিসেবে পরিচিত ছিল। এখানে শহরটির প্রধান হাসপাতালের কর্মীরাও থাকতেন।

হোস্টেলটির বাসিন্দার বলছেন, মধ্যরাতের পর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আগুন দেখতে পান তারা। কেউ কেউ ধোঁয়ার মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে পারলেও বেশিরভাগ মানুষকে দমকলকর্মীরা ছাদ থেকেই উদ্ধার করেছে।

বাসিন্দাদের একজন, টালা সিলি জানান, তৃতীয় তলা থেকে শুরু হওয়া আগুন থেকে বাঁচতে তিনি জানালা দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়েন।

Also Read: নিউ জিল্যান্ডে হোস্টেলে আগুন লেগে ৬ মৃত্যু, নিখোঁজ ১১

“আমি উপরের তলায় ছিলাম, কিন্তু এত বেশি ধোঁয়া ছিল যে হলওয়েতে যেতে পারিনি, তাই জানালা দিয়ে লাফ দিই,” রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আরএনজেডকে বলেছেন তিনি।

ভবনটির ছাদ ধসে পড়ার পর পুলিশ বুধবারই প্রথম সেখানে অগ্রবর্তী উদ্ধারকারী দল পাঠানোর অনুমতি দেয়।

“ঘটনাস্থল ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা একটি বিস্তৃত ও পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া, এর জন্য কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে আমাদের, দিনকয়েক লাগতে পারে,” বলেছেন বেনেট।

২০১১ সালে নিউ জিল্যান্ডের সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় লোফার্স লজকে জরুরি আবাসনদাতা হিসেবে মনোনীত করেছিল।ওই চুক্তি পরে শেষ হয়ে যায় বলে মঙ্গলবার জানায় কিউই সরকার।

তবে হোস্টেলটি এখনও অস্থায়ী আবাসনের বিস্তৃত অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্কের মধ্যেই আছে।

ওয়েলিংটনে গৃহহীনদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থাও জানিয়েছে, আগে তাদের অনেক মক্কেলও থাকার জায়গা হিসেবে ওই হোস্টেলটি বেছে নিয়েছিলেন।

বাড়ির দাম ও ভাড়া আকাশছোঁয়া হওয়ায় এবং সরকারি আবাসন প্রকল্পের অপর্যাপ্ততার কারণে নিউ জিল্যান্ডে এখনও আবাসনের ব্যাপক সংকট আছে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেও তিন হাজার তিনশর বেশি পরিবার জরুরি আবাসন প্রকল্পে ছিল বলে সরকারি হিসাবেই দেখা যাচ্ছে।