চীন তার শূন্য কোভিড নীতি শিথিলে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করায় দেশটির নাগরিকদের অনেকে যেমন স্বস্তিবোধ করছে, তেমনি এসব পদক্ষেপ দেশটির স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ওপর কী প্রভাব ফেলে তা নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে।
পদক্ষেপগুলো সংক্রমণ মোকাবেলায় কতটুকু কার্যকর হয়, তা দেখতে চীনের নাগরিকরাও উদগ্রীব হয়ে আছে। কেননা, এর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই চীন সব বিধিনিষেধ তোলা হবে কিনা, তুললে কবে নাগাদ তোলা যাবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে।
সব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলে দেশটিতে কী পরিমান লোকের মৃত্যু হবে, বিভিন্ন দেশের গবেষকরা এখন তা পর্যালোচনা করছেন; অনেকে চীনে টিকাদানের হার তুলনামূলক কম হওয়া এবং সেখানে এখনও হার্ড ইমিউনিটি তৈরি না হওয়াকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবেও দেখছেন।
মহামারী শুরুর পর শুক্রবার পর্যন্ত চীন কোভিডে ৫ হাজার ২৩৩ মৃত্যু এবং উপসর্গধারী ৩ লাখ ৩১ হাজার ৯৫২ রোগী শনাক্তের তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলে চীনে কত মৃত্যু হতে পারে সে বিষয়ে যেসব মূল্যায়ন আছে, তার কয়েকটি নিচে দেওয়া হলো-
২০ লাখের বেশি মৃত্যু
সাংহাই জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে গতমাসে চীনের দক্ষিপশ্চিমাঞ্চলীয় গুয়ানসি অঞ্চলের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের প্রধান ঝোউ জিয়াটং বলেছেন, চলতি বছর হংকং যেভাবে কোভিড মোকাবেলায় দেওয়া বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে, চীনের মূল ভূখণ্ডও যদি একই পথ অনুসরণ করে তাহলে ২০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
১৫ লাখ ৫০ হাজার
নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় মে-তে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা ধারণা দিয়েছিলেন, টিকাদানের গতি বা চিকিৎসার আওতা বাড়ানোর মতো সুরক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা ছাড়াই চীন যদি তাদের কঠোর শূন্য কোভিড নীতি তুলে নেয় তাহলে কোভিডে দেশটিতে ১৫ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হবে।
কোভিডের বিভিন্ন ধরনের তীব্রতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে যত তথ্য উপাত্ত আছে তার ভিত্তিতে এই গবেষকদের দেওয়া পূর্বাভাস বলছে, বিধিনিষেধ একেবারে তুলে নেওয়া হলে সংক্রমণের চূড়ায় চীনে ধারণক্ষমতার ১৫ গুণ বেশি নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট দরকার হবে, যার কারণেই প্রায় ১৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
তবে টিকাদানের গতি বাড়াতে মনোযোগী হলে মৃত্যুর এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে আসবে, বলেছেন গবেষকরা। ওই গবেষকদের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে চীনের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও ছিলেন।
২১ লাখ পর্যন্ত
তুলনামূলক কম পরিমান টিকা ও বুস্টার দেওয়ার ফলে এবং হাইব্রিড ইমিউনিটির ঘাটতির কারণে শূন্য কোভিড নীতি তুলে নিলে চীন ১৩ লাখ থেকে ২১ লাখ পর্যন্ত মৃত্যু দেখতে পারে বলে সোমবার সতর্ক করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈজ্ঞানিক তথ্য ও পর্যালোচনা কোম্পানি এয়ারফিনিটি।
হংকংয়ে দুই বছরের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে বিএ.১ ধরনের যে ঢেউ দেখা গিয়েছিল, তার তথ্যউপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এই বিধিনিষেধ শিথিলে চীনের মূল ভূখণ্ডে কত মৃত্যু হতে পারে সে বিষয়ক মডেল দাঁড় করানো হয়েছে, বলেছে তারা।