ইউক্রেইনজুড়ে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, গোলা হামলায় নিহত অন্তত ৯

রাশিয়ার এ হামলা দেশটির অনেক এলাকাকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করেছে, গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকেও।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2023, 11:28 AM
Updated : 9 March 2023, 11:28 AM

সেনা পাঠানোর বর্ষপূর্তির দুই সপ্তাহ পর ইউক্রেইনজুড়ে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেইনের বিভিন্ন অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে রাশিয়ার এ হামলা দেশটির অনেক এলাকাকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করেছে, গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকেও।

মধ্য ফেব্রুয়ারির পর রাশিয়া এই প্রথম ইউক্রেইনের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল; এতে ১০টি অঞ্চলের স্থাপনা ও আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।  

“দখলদাররা কেবল বেসামরিকদের সন্ত্রস্ত করতে পারে। এটাই পারে তারা। কিন্তু এগুলো কাজে আসবে না। যা যা করছে, তার দায় এড়াতে পারবে না তারা,” বিবৃতিতে বলেছেন জেলেনস্কি।

ইউক্রেইনের জরুরি বিভাগের ভাষ্যমতে, ক্ষেপণাস্ত্রে পশ্চিমাঞ্চলীয় লিভভ অঞ্চলের একটি গ্রামের বাড়ি ধসে অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকা থেকে পাওয়া ড্রোন ফুটেজে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া একটি ঘরের আশপাশে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ভবন দেখা গেছে। 

ক্ষেপণাস্ত্রে মধ্যাঞ্চলীয় দিনিপ্রো অঞ্চলে একজন এবং খেরসনে গোলার আঘাতে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

বিস্ফোরণের শব্দ রাজধানীর কিইভের বাসিন্দাদের ঘুম থেকে জেগে উঠতে বাধ্য করেছে; শহরটিতে টানা ৭ ঘণ্টা বিমান হামলার সতর্ক সংকেতও বেজেছে। অক্টোবরে রাশিয়া তাদের নিয়মিত বিমান হামলা শুরুর পর আর কখনোই কিইভে একটানা এই সংকেত বাজেনি।

মস্কো বলছে, তারা যুদ্ধক্ষেত্র যে অনেক দূরে ইউক্রেইনের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে কিইভের যুদ্ধসক্ষমতা কমাতে। অন্যদিকে ইউক্রেইনের ভাষ্য, বেসামরিকদের ক্ষতি ও ভয় দেখানো ছাড়া রাশিয়ার বিমান হামলার কোনো সামরিক উদ্দেশ্য নেই।

বৃহস্পতিবারের হামলায় মস্কো ছয়টি কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মেরেছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা। রাশিয়াকে এর আগে একদিনে একসঙ্গে এতগুলো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মারতে দেখা যায়নি।

দেশটির কাছে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র স্বল্প পরিমাণে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে; রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে প্রায়ই গর্ব করতে দেখা যায়। এ ক্ষেপণাস্ত্রের জবাব নেটোর কাছে নেই বলেও বারবার দাবি করেছেন তিনি।

ইউক্রেইন বলছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউক্রেইনের গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

এই জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়া যুদ্ধের শুরুর দিক থেকেই দখলে রেখেছে। ইউক্রেইনই এই কেন্দ্রটি লক্ষ্য করে নিয়মিত হামলা চালায় বলে আগে বেশ কয়েকবার মস্কোর দিক থেকে অভিযোগও এসেছিল। 

বৃহস্পতিবার ইউক্রেইনের অভিযোগের পর মস্কো বলেছে, কেন্দ্রটি নিরাপদ আছে।

“সবই পুরোপুরি স্বাভাবিক। কেন্দ্রে থাকা বিশেষজ্ঞরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। পারমাণবিক দুর্ঘটনার বিপদ বা ঝুঁকি নেই। প্রয়োজনের চেয়েও বেশি জ্বালানি আছে, দরকার হলে তা ওই কেন্দ্রটিতে সরবরাহ করা হবে,” বলেছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা রোসেনেরগোটোমের প্রধান নির্বাহীর উপদেষ্টা রেনাত কার্চা।

বৃহস্পতিবার রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র কৃষ্ণসাগরীয় বন্দরনগরী ওডেসা এবং ইউক্রেইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের পাশাপাশি ঝিতোমির, ভিনিৎসিয়া দিনিপ্রোর পশ্চিমে অবস্থিত রিভনে ও মধ্য ইউক্রেইনের পোল্টাভাতেও আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।