ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে বিরোধের জেরে ইউরোপের একের পর এক দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে রাশিয়া। তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন লাটভিয়া। রাশিয়ার এনার্জি জায়ান্ট গ্যাজপ্রম দেশটিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
গ্যাজপ্রম কর্তৃপক্ষ লাটভিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাস কেনার চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করার অভিযোগ তুলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তবে লাটভিয়া চুক্তির কোন শর্ত লঙ্ঘন করেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি বলে জানায় বিবিসি।
প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির জন্য লাটভিয়া প্রতিবেশী রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। যদিও তাদের জ্বালানি খাত পুরোপুরি গ্যাসের উপর নির্ভরশীল নয়। দেশটির মোট জ্বালানি চাহিদার ২৬ শতাংশ পূরণ হয় গ্যাসের মাধ্যমে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিযোগ, ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালানোর জেরে পশ্চিমা বিশ্বের রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশোধ নিতে দেশটি তাদের গ্যাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
লাটভিয়া পশ্চিমা সামরিক জোট নেটো ভুক্ত দেশ। এ অঞ্চলে নেটোর বিস্তারকে ভালো চেখে দেখছে না রাশিয়া। নেটোর শক্তিবৃদ্ধিকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য হুমকি মনে করে মস্কো। রাশিয়ার ইউক্রেইনে আগ্রাসনের অন্যতম প্রধান কারণ এটি।
এদিকে, ইউক্রেইন আক্রান্ত হওয়ার পর রাশিয়ার প্রতিবেশী ইউরোপের দেশগুলো নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগে পড়ে গেছে।
যে কোনো সময় রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার হতে পারে, এমন আশঙ্কায় অবশ্য তিন বাল্টিক দেশ লাটভিয়া, এস্তোনিয়া ও লিথুনিয়ার দীর্ঘদিনের।
সম্প্রতি নেটো ওই তিন দেশে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।
সাবেক সভিয়েত ইউনিয়নের অংশ বাল্টিক দেশগুলো আগামী বছর থেকে রাশিয়ার গ্যাস আমদানি বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছিল।
গ্যাজপ্রম গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে খুব দ্রুত ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে। গত বুধবার থেকে এই পাইপলাইনের সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর নিজেদের অর্থনীতি বাঁচাতে রাশিয়া ইইউভুক্ত দেশগুলোকে ইউরোতে নয় বরং রুশ মুদ্রা রুবলে গ্যাজপ্রমের গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে বলেছিল। যা মানতে রাজি হয়নি ইইউর দেশগুলো। তাদের ব্যাখ্যা, গ্যাস সরবরাহ চুক্তিতে এ ধরনের কোনো শর্ত নেই যে গ্যাসের দাম রুবলে পরিশোধ করতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার লাটভিয়ার গ্যাস কোম্পানি ‘লাটভিজাস গ্যাজ’ কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, তারা রাশিয়ার গ্যাস কিনছেন এবং বিল ইউরোতেই পরিশোধ করছেন।
রুবলে গ্যাসের দাম পরিশোধ না করার এরআগে গ্যাজপ্রম বুলগেরিয়া, ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডসে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
জার্মানির ‘শেল এনার্জি ইউরোপ’র কাছেও গ্যাস বিক্রি স্থগিত করেছে রাশিয়া।
চাহিদা পূরণ করতে ইইউ এখন নরওয়ে, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গ্যাস আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।