কয়েক মাস ধরে চলা বোমা হামলার পর শহরটির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে তারা।
আজভস্তাইল ইস্পাত কারখানার দুর্ভেদ্য ভূগর্ভস্থ বাংকার ও টানেলগুলোতে আশ্রয় নিয়ে থাকা সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে ইউক্রেইন যুদ্ধের সবচেয়ে দীর্ঘতম ও রক্তাক্ত লড়াইয়ের সম্ভাব্য অবসান সূচিত হল বলে ধারণা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
এটি পুরো যুদ্ধে ইউক্রেইনের একটি উল্লেখযোগ্য পরাজয়। রাশিয়ার আক্রমণ ও অবরোধে মারিউপোল এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপ। এখানে প্রায় লাখো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ইউক্রেইন জানিয়েছে।
মারিউপোল শহরের বাকি অংশ রুশ বাহিনীর হাতে চলে যাওয়ার পর শত শত ইউক্রেইনীয় সেনা ও বেসামরিক আজভস্তাইল ইস্পাত কারখানার ভূগর্ভে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গত কয়েক সপ্তাহে সেখানে থাকা বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
এক বিবৃতিতে সেনাদের সরিযে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছে, “মারিউপোল গ্যারিসন তাদের যুদ্ধ মিশন পূরণ করেছে। সর্বোচ্চ সামরিক কমান্ড সেনাদের জীবন রক্ষার জন্য আজভস্তাইলে নিযুক্ত ইউনিটের কমান্ডারদের নির্দেশ দিয়েছেন। মারিউপোলের প্রতিরোধকারীরা আমাদের সময়ের নায়ক।”
ইউক্রেইনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্না মাইলার জানিয়েছেন, ৫৩ জন আহত সেনাকে আজভস্তাইল ইস্পাত কারখানা থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রিত শহর নভোজভস্কের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে আর আরও ২১১ জনকে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শহর ওলেনিভকায় পাঠানো হয়েছে।
যাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তারা রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য বন্দি বিনিময়ের ‘বিষয়’ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এখন আজভস্তাইল ইস্পাত কারখানায় আরও কতোজন ইউক্রেইনীয় সেনা আছে তা পরিষ্কার হয়নি। ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যারা এখন সেখানে আছে তাদেরও সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
সোমবার রাতে রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক আজভস্তাইল থেকে সেনাদের বহন করে নিয়ে আসা পাঁচটি বাসকে নভোজভস্কে হাজির হতে দেখেছেন। ওই সেনাদের অনেকেই আহত ছিলেন এবং তাদের স্ট্রেচারে করে বাস থেকে নামানো হয়।
স্থানীয় সময় ভোরে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বক্তৃতায় ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “আশা করছি, আমরা আমাদের লোকদের জীবন বাঁচাতে পারবো। তাদের মধ্যে মারাত্মক আহত কয়েকজন আছেন। তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন। ইউক্রেইনের জন্য ইউক্রেইনের বীরদের বেঁচে থাকা দরকার।”
রয়টার্স জানিয়েছে, নভোজভস্কে আসা একটি বাসে ‘জেড’ অক্ষরটি আঁকা ছিল, এটি রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতীক। বাসের ভেতরে তিন স্তরের স্ট্রেচারে লোকজন শুয়ে আছে এমনটি দেখা গেছে। কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই তারা বাইরে বের হয়ে আসে। একজনকে হুইলচেয়ারে করে নামানো হয়, তার মাথায় ভারী ব্যান্ডেজ ছিল।
মারিউপোলের আহত ইউক্রেইনীয় সেনাদের নভোজভস্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে রাশিয়া সম্মত হওয়ার কয়েক ঘন্টা পর সোমবার রাতে ইস্পাত কারখানাটি থেকে সেনাদের সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়।
ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে মারিউপোল শহর রাশিয়ার আক্রমণ ও ইউক্রেইনের প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
আরও পড়ুন: