জার্মানির নির্বাচনে জয়ের পথে মধ্য বামপন্থি দল এসপিডি

জার্মানির সাধারণ নির্বাচনে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নকে (সিডিইউ) সামান্য ব্যবধানে পেছনে ফেলে জয় পেতে যাচ্ছে মধ্য বামপন্থি দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2021, 03:38 AM
Updated : 27 Sept 2021, 06:38 AM

রোববারের এ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে জয়ের আভাস স্পষ্ট হয়ে ওঠার পর এসপিডি দাবি করেছে, জনরায় স্পষ্টতই তাদের পক্ষে।

এর ফলে ২০০৫ থেকে ১৬ বছর ধরে মের্কেলের অধীনে চলা রক্ষণশীল শাসনের অবসানের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অবশ্য তার দল সিডিইউর প্রার্থী আরমিন লাশেট দাবি করেছেন, তারা এখনও সরকার গঠনে সক্ষম।

এসপিডি মোট ভোটের ২৫.৭ শতাংশ পাওয়ার পথে রয়েছে আর মের্কেলের সিডিইউ/সিএসইউ রক্ষণশীল জোট ২৪ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেতে যাচ্ছে বলে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে।

তৃতী অবস্থানে থাকা গ্রিন পার্টি ১৪.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দলের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা ফল দেখিয়েছে এবার।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেউ না পেলেও বড় দুই দলই মনে করছে, তারা জার্মানির পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবে।

 

এ নির্বাচনে যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, তা আগেই আঁচ করা যাচ্ছিল। বুথ ফেরত জরিপেও তেমন ফলাফলই আসছিল।

প্রাথমিক ফলাফলে এসপিডি এগিয়ে থাকলেও জার্মানির পরবর্তী সরকারে নেতৃত্ব দেবে কোন দল, কে হবেন মের্কেলের উত্তরসূরী, এখনও তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

চূড়ান্ত ফলাফলে যে দলই এগিয়ে থাক, সরকার গড়তে তাদের জোটের শরণ নিতে হবে। ফলে নতুন চ্যান্সেলর কে হবেন, তা জানতেও অপেক্ষায় থাকতে হবে। 

জার্মানির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে কোনো জোট আধিপত্য করার মত সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে, আর তারা গত চার বছরের মত বেমানান ‘গ্র্যান্ড কোয়ালিশন’ এর পুনরাবৃত্তি করতে না চাইলে এসপিডি অথবা মের্কেলের সিডিইউ এর নেতৃত্বে ত্রিমুখী জোট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

নতুন এই জোটের সমঝোতা হতে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে। গ্রিন পার্টি ও লিবারেল ফ্রি ডেমোক্রেটস (এফডিপি) এর মত দলগুলোও সরকারের অংশীদার হতে পারে।

বিবিসি বলছে, সরকার পরিচালনার জন্য একটি জোট তৈরি না হওয়া পর্যন্ত মের্কেলই চ্যান্সেলরের দায়িত্ব সামলে যাবেন। সমঝোতায় দেরি হলে নতুন চ্যান্সেলর পেতে চলতি বছর পারও হয়ে যেতে পারে।

পরবর্তী চ্যান্সেলরকে প্রথমত আগামী চার বছর ইউরোপের অর্থনীতির নেতৃত্ব দিতে হবে আর ভোটারদের শীর্ষ এজেন্ডা জলবায়ু পরিবর্তনের কথাও তাকে মাথায় রাখতে হবে।

নতুন চ্যান্সেলর কীভাবে ঠিক হবে?

জার্মানির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে আসন থাকে অন্তত ৫৯৮টি। অন্তত বলা হচ্ছে কারণ এই সংখ্যা বাড়তে পারে। জার্মানির নির্বাচন পদ্ধতিই এমন।

রোববার নির্বাচনে ভোটাররা দুটি করে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। প্রথমটি নির্বাচনী আসনে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য, দ্বিতীয়টি পছন্দের দলের জন্য৷ প্রার্থী ও দল ভিন্ন হলেও সমস্যা নেই৷

ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯টি আসনে প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচিত হবেন। আর দ্বিতীয় ব্যালটে যে দল যত শতাংশ সমর্থন পাবে, সেই অনুপাতে বুন্ডেসটাগের বাকি আসনগুলোতে প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন।

এ হিসাবে দ্বিতীয় ভোটের ভিত্তিতে বাকি ২৯৯ আসনে দলীয় মনোনয়ন অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনের কথা থাকলেও বাস্তবে পার্লামেন্টে সদস্যসংখ্যা ৫৯৮ ছাপিয়ে যায়৷

এর কারণ হল, কোনো দল যদি শতকরা হিসেবে দ্বিতীয় ভোটের তুলনায় বেশি হারে প্রথম ভোট পায়, তখন জটিল এক নিয়মের ভিত্তিতে সেই দল সংসদে কিছু বাড়তি আসন পায়৷ তখন ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে বাকি দলগুলোকেও বেশি আসন দিতে হয়৷

ভোটের হিসাবে নতুন বুন্ডেসটাগ আকৃতি পেয়ে গেলে তখন শুরু হবে সরকার গঠনের হিসাব। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল অন্য দলগুলোর সঙ্গে জোট গড়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারলে সরকার গঠনের অনুমতি পাবে।

আর সেই জোটের নেতাই হবেন জার্মানির আগামী দিনের চ্যান্সেলর, যদি তিনি বুন্ডেসটাগের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন।