মের্কেলের পরে কে? ভোট দিচ্ছে জার্মানি

নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ছয় কোটির বেশি জার্মান নাগরিক, আর এর মধ্যে দিয়ে জার্মানিতে আঙ্গেলা মের্কেল যুগের অবসান ঘটতে যাচ্ছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2021, 06:50 AM
Updated : 26 Sept 2021, 08:58 AM

দীর্ঘ ১৬ বছরের নেতৃত্বে চ্যান্সেলর মের্কেল ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির এ দেশকে বদলে দিয়েছেন অনেকখানি। মের্কেল তার দেশে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে তরুণ ভোটারদের অনেকে অন্য কোনো চ্যান্সেলরের নামও মনে করতে পারেন না। 

কিন্তু কে হচ্ছেন মের্কেলের উত্তরসূরি? ভোটের আগে জনমত জরিপে তার স্পষ্ট কোনো আভাস মেলেনি।

রোববার জার্মানিতে ছুটির দিন, রাজধানী বার্লিনের রাস্তায় হবে বার্ষিক ম্যারাথন, কিন্তু সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশজুড়ে চলবে ভোটের ম্যারাথন, যার মধ্যে দিয়ে গঠিত হবে জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ- বুন্ডেসটাগ।    

ফেডারেল জার্মানির ইতিহাসে এবারই প্রথম নির্বাচনের আগে তিন প্রধান দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীরা টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। তবে ভোটের আগে নিশ্চিত জয়ের আভাস পাচ্ছেন না কেউ।  

সর্বশেষ জনমত জরিপ বলছে, সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি খুব সামান্য ব্যবধানে মের্কেলের রক্ষণশীল ইউনিয়ন শিবিরের চেয়ে এগিয়ে আছে।

তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, ভোট শেষে যে দলই এগিয়ে থাক, সরকার গড়তে তাদের জোটের শরণ নিতে হবে।

জার্মানির সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আঙ্গেলা মের্কেলের ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটতে চলেছে। ছবি: রয়টার্স

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে লিখেছে, এসপিডি প্রার্থী ওলাফ শলৎস ও ইউনিয়ন শিবিরের প্রার্থী আরমিন লাশেটের হাতে সংসদের আসন সংখ্যার মধ্যে ফারাক যদি সত্যি খুব কম হয়, সে ক্ষেত্রে দুই পক্ষই সমান্তরালভাবে সরকার গড়ার লক্ষ্যে বাকিদের সঙ্গে আলোচনা চালাতে পারে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷

বুন্ডেসটাগে আসন থাকে অন্তত ৫৯৮টি। অন্তত বলা হচ্ছে কারণ এই সংখ্যা বাড়তে পারে। জার্মানির নির্বাচন পদ্ধতিই এমন।

কোন দল এ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে তা ভোট শেষে রাতের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে সরকারে কে যাচ্ছে তা স্পষ্ট হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। সরকার গঠনের জন্য অন্য দলের সঙ্গে জোট বেঁধে পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে কোনো দলকে। ফলে নতুন চ্যান্সেলর কে হবেন, তা জানতেও অপেক্ষায় থাকতে হবে।   

বিদায়ী চ্যান্সেলর মের্কেল ভোটের আগে তার দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছেন, জার্মানির প্রয়োজন স্থিতিশীলতা, আর তরুণ জার্মানদের দরকার সুন্দর ভবিষ্যত। সুতরাং ক্ষমতায় কে থাকবে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

জার্মানিতে ভোট হয় কীভাবে?

১৮ বছরের বেশি বয়স হলে জার্মানিতে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়া যায়। দেশটিতে ভোট দেওয়ার যোগ্য নাগরিকের সংখ্যা ৬ কোটি ৪০ লাখ।  

ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, পুরো জার্মানিতে ৮৮ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হচ্ছে রোববার। ভোটগ্রহণের কাজে যুক্ত রয়েছেন সাড়ে ছয় লাখ স্বেচ্ছাসেবী। অবশ্য পোস্টাল ব্যালেটে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে আগেই।

জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সবাইকে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে নাম নিবন্ধন করতে হয়৷ তাই সেই তালিকা থেকে শুধু জার্মান নাগরিকদের বেছে নিয়ে ডাকযোগে ভোট দেবার আমন্ত্রণ পাঠানো হয়৷ জাতীয় পরিচয়পত্র ও সেই আমন্ত্রণপত্র নিয়ে নির্ধারিত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গেলেই ভোট দেওয়া যায়৷

জার্মানিতে ভোটগ্রহণের জন্য সাধারণত রোববারের দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়, যাতে নাগরিকেরা ছুটির দিনে নির্বিঘ্নে ভোট দেবার সুযোগ পান৷ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হলে গণনা শুরু হয়৷

শিল্পোন্নত দেশ হয়েও জার্মানি নিরাপত্তার খাতিরে এখনও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে না৷ কাগজের ব্যালট গণনার পর দ্রুত ফলাফল জানতে অবশ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ছে৷

জার্মানির নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিবিসির গ্রাফিক্স

নতুন চ্যান্সেলর কীভাবে ঠিক হবে?

জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোটাররা দুটি করে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান৷ প্রথমটি নির্বাচনী আসনে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য, দ্বিতীয়টি পছন্দের দলের জন্য৷ প্রার্থী ও দল ভিন্ন হলেও সমস্যা নেই৷

ভোটারদের দেওয়া প্রথম ভোটের ভিত্তিতে ২৯৯টি আসনে প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচিত হবেন। আর দ্বিতীয় ব্যালটে যে দল যত শতাংশ সমর্থন পাবে, সেই অনুপাতে বুন্ডেসটাগের বাকি আসনগুলোতে প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন।

এ হিসাবে দ্বিতীয় ভোটের ভিত্তিতে বাকি ২৯৯ আসনে দলীয় মনোনয়ন অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনের কথা থাকলেও বাস্তবে সংসদে সদস্যসংখ্যা ৫৯৮ ছাপিয়ে যায়৷

এর কারণ হল, কোনো দল যদি শতকরা হিসেবে দ্বিতীয় ভোটের তুলনায় বেশি হারে প্রথম ভোট পায়, তখন জটিল এক নিয়মের ভিত্তিতে সেই দল সংসদে কিছু বাড়তি আসন পায়৷ তখন ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে বাকি দলগুলোকেও বেশি আসন দিতে হয়৷

সব মিলিয়ে ৪৭টি দল এ বছর জার্মানির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তবে প্রথম ব্যালটে কমপক্ষে তিনটি আসনে দলীয় প্রার্থীরা জয় না পেলে কিংবা দ্বিতীয় ব্যালটে কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ ভোট না পেলে কোনো দল বুন্ডেসটাগে স্থান পায় না৷

ভোটের হিসাবে নতুন বুন্ডেসটাগ আকৃতি পেয়ে গেলে তখন শুরু হবে সরকার গঠনের হিসাব। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল অন্য দলগুলোর সঙ্গে জোট গড়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারলে সরকার গঠনের অনুমতি পাবে। আর সেই জোটের নেতাই হবেন জার্মানির আগামী দিনের চ্যান্সেলর, যদি তিনি বুন্ডেসটাগের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন। 

দৌড়ে কারা?

জার্মানির এসপিডি নেতা ওলাফ শলৎস৷

ওলাফ শলৎস:
জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর দৌড়ে এগিয়ে আছেন সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের নেতা ওলাফ শলৎস৷ তিনি বর্তমান জোট সরকারে অর্থমন্ত্রী ও ডেপুটি চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷

ডয়চে ভেলে লিখেছে, শলৎসের অভিজ্ঞতা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই৷ সংকট মোকাবিলায় সক্ষম হিসেবেও তিনি পরিচিত৷ তারপরও অনেকে মনে করছেন, কী যেন নেই৷

নির্বাচনের এক বছরেরও বেশি সময় আগে গতবছর এসপিডির চ্যান্সেলর প্রার্থী হিসেবে শলৎসের মনোনয়ন সবাইকে বেশ অবাক করেছিল৷ কারণ তার মাত্র কয়েকমাস আগেই তিনি দলের প্রধানের পদে লড়ে হেরেছিলেন৷

তবে শলৎস নিজের প্রতি বিশ্বাস ধরে রেখে নিরলসভাবে সরকারে কাজ করে গেছেন৷ নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেও তিনি অনেক ঝড় মোকাবিলা করেছেন৷

কোভিড সংকটের সময় তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন৷ অর্থমন্ত্রী হিসেবে অর্থনীতি ও ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের সহায়তায় জরুরি তহবিল বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷

২০০৩ সালে তৎকালীন এসপিডি সরকার ‘অ্যাজেন্ডা ২০১০’ নামে একটি শ্রমবাজার সংস্কারের প্রস্তাব এনেছিল৷ বেকার ভাতার নিয়ম আরো কঠোর করার কথা বলায় প্রস্তাবটি নিয়ে সেই সময় বেশ বিতর্ক হয়েছিল৷ সেসময় দলের মহাসচিব ছিলেন শলৎস৷ ফলে প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জোগাড়ের কাজটি ছিল তার৷

তিনি সে সময় বলেছিলেন, সেই সময় তার প্রথম কাজ ছিল নিজের মতামতের কথা না ভেবে তখনকার চ্যান্সেলর ও দলের প্রধান গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার ও এসপিডির প্রতি ‘পুরো আনুগত্য’ দেখানো৷ তিনি নিজেকে নয়, দলকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি৷ আঙ্গেলা মের্কেলের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক দল সিডিইউর কাছে চ্যান্সেলরশিপ হারিয়েছিল এসপিডি৷ ওলাফ শলৎসেরও এমন এক ছবি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যা থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লেগেছে৷

শলৎস এখন এসপিডির মহাসচিব পদ ছাড়াও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হামবুর্গের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ তাকে দলের রক্ষণশীল অংশের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ আবার এটাও ঠিক, তিনি বাম নাকি ডানপন্থি, তা বোঝা কঠিন।

১৯৭৫ সালে হাই স্কুলে পড়ার সময় এসপিডিতে যোগ দিয়েছিলেন শলৎস৷ ১৯৯৮ সালে জার্মান সংসদে নির্বাচিত হন তিনি৷ হামবুর্গে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন৷ ব্যবসায়িক আইন বিষয়ে তার পারদর্শিতা ছিল৷ সে কারণে অর্থনীতি ও ব্যবসা কীভাবে চলে সে সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা ছিল ভালো৷ সেই অভিজ্ঞতা সরকারি কাজে লাগিয়েছেন শলৎস৷

২০১৯ সালে এসপিডির প্রধান পদে লড়েছিলেন তিনি, কিন্তু হেরে গিয়েছিলেন৷ তারপরও দমে না গিয়ে অর্থমন্ত্রী ও ডেপুটি চ্যান্সেলর হিসেবে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন৷

তার পুরস্কার হিসেবে চ্যান্সেলর পদের প্রার্থী হিসেবে তাকে বেছে নিয়েছে এসপিডি৷ এক বছর আগে এই মনোনয়ন পাওয়ার পর তার জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে৷ এছাড়া তার কারণেই এসপিডি দলেরও জনপ্রিয়তা বাড়ছে৷

জার্মানির গ্রিন পার্টির নেতা আনালেনা বেয়ারবক৷

আনালেনা বেয়ারবক:
গত এপ্রিলে গ্রিন পার্টির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন চ্যান্সেলর প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়৷ তিনি আনালেনা বেয়ারবক৷ বর্তমানে দলটির দুজন শীর্ষ নেতার একজন তিনি৷

২০১৮ সালে বেয়ারবক গ্রিন পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হন৷ দলের আরেক শীর্ষ নেতা হলেন রোব্যার্ট হাবেক৷

হাবেক-বেয়ারবক জুটি দলের হাল ধরার পর ইউরোপীয় ও জার্মানির রাজ্য নির্বাচনগুলোতে গ্রিন পার্টি ভালো সফলতা দেখিয়েছে৷ এমনকি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের জরিপে দলটির অবস্থান জার্মানির অন্য সব দলের উপরে ছিল৷ যদিও মঙ্গলবার প্রকাশিত জরিপে ছিল তিন নম্বরে (১৭ শতাংশ)৷

ওই জরিপে সবার উপরে ছিল সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি (২৫ শতাংশ); দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল আঙ্গেলা মের্কেলের সিডিইউ (২২ শতাংশ)৷

রোববারের ভোটের পর জার্মানিতে যে নতুন সরকার গঠিত হবে, সেখানেও গ্রিন পার্টি থাকতে পারে৷

দলের চ্যান্সেলর প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর কিছু ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হন বেয়ারবক৷ যেমন তার আনুষ্ঠানিক জীবনবৃত্তান্তে ছোট কিছু ভুল থাকার অভিযোগ আনা হয়৷

ক্রিসমাস বোনাসের উপর কর দিতে দেরি করার অভিযোগও উঠেছিল৷ এছাড়া তার নতুন বইয়ের কিছু অংশ নকল করা এবং এক সাক্ষাৎকারে তিনি বর্ণবাদী শব্দ ব্যবহার করেছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠে৷

সেসব ঘটনায় তিনি দ্রুত ক্ষমা চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তারপরও বেয়ারবকের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে যায়।

৪০ বছর বয়সী বেয়ারবকের জন্ম লোয়ার সাক্সোনি রাজ্যে৷ পরিবারসহ প্রায় আট বছর ধরে তিনি ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের পটসডাম শহরে বসবাস করছেন৷ এবারের নির্বাচনে তিনি সেখান থেকেই প্রার্থী হয়েছেন৷ একই আসনে প্রার্থী হয়েছেন এসপিডির চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাফ শলৎস৷

জার্মানির জাতীয় ট্র্যামপোলিন জিমন্যাস্টিকসে তৃতীয় হয়েছিলেন বেয়ারবক৷ ১৬ বছর বয়সে তিনি এক বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছিলেন৷ এরপর জার্মানির হানোফারে আইন পড়ে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিকসে গিয়ে আন্তর্জাতিক আইন পড়েছেন৷

জার্মানির সিডিইউ নেতা আরমিন লাশেট৷

আরমিন লাশেট:
মের্কেলের দল সিডিইউ থেকে এবার চ্যান্সেলর প্রার্থী হয়েছেন আরমিন লাশেট৷ বর্তমানে তিনি জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল নর্থরাইন ভেস্টফালিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷

জার্মানির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশের বাস এই রাজ্যে৷ ২০১৭ সাল থেকে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী লাশেট৷ তাই তিনি প্রায়ই বলেন, এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের রাজ্য পরিচালনাকারী মুখ্যমন্ত্রী চ্যান্সেলরও হতে পারেন৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি আটজন চ্যান্সেলর পেয়েছে৷ এর মধ্যে শুধু প্রথম চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার (১৯৪৯-১৯৬৩) এই রাজ্যের ছিলেন৷

সাবেক আইনজীবী ও সাংবাদিক লাশেটের স্থানীয়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাচনে (১৯৯৪-১৯৯৮) জয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ এমনকি ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টেরও সদস্য ছিলেন৷ সে হিসেবে মের্কেল যখন চ্যান্সেলর হয়েছিলেন, তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা হয়েছে লাশেটের৷

অনেকদিন ধরেই মের্কেলের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে পরিচিত লাশেট৷ ২০১৫ সালে মের্কেল যখন শরণার্থীদের জন্য জার্মানির দরজা খুলে দিয়েছিলেন তখন নিজ দলের অনেক নেতার সমর্থন না পেলেও লাশেট তার পক্ষে ছিলেন৷

অবশ্য সাম্প্রতিক কোভিড সংকটের সময় মের্কেলের কাছ থেকে তাকে একটু দূরেই থাকতে দেখা গেছে৷ এরপরও চলতি বছরের জানুয়ারিতে লাশেট যখন সিডিইউ দলের প্রধান নির্বাচিত হন, তখন তাকে মের্কেলের নীতি চালিয়ে যাওয়ার মূল ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়েছে৷

১৯৬১ সালে বেলজিয়াম সীমান্তের কাছে জার্মানির আখেন শহরে লাশেটের জন্ম৷ তার দাদা-দাদি দুজনই বেলজিয়ামের৷ লাশেট ফরাসি ভাষায় পারদর্শী৷ ফ্রান্সের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও তার ভালো সখ্য রয়েছে৷

অবশ্য সবশেষ জরিপে লাশেটের দল সিডিইউ সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডির চেয়ে পিছিয়ে আছে৷ গত জানুয়ারিতে লাশেট সিডিইউর দায়িত্ব নেয়ার পর প্রায় ১৫ বছর পর সিডিইউর জনসমর্থন কমে এসপিডির পেছনে চলে গেছে৷

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা লাশেটের জনসমর্থন কমিয়েছে৷ গত জুলাইতে নর্থরাইন ভেস্টফালিয়া এবং আরেক রাজ্যে বন্যায় ১৮০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সে সময় উপদ্রুত এলাকা সফরে গিয়ে জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন৷ পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা লাশেটকে সে সময় স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঠাট্টা করতে দেখা যায়৷ এরপর সমালোচনা শুরু হলে লাশেট বেশ কয়েকবার ক্ষমাও চেয়েছেন৷

বন্যার কারণ জলবায়ু পরিবর্তন কিনা, তা নিয়ে যখন আলোচনা চলছে তখন একদিন লাশেট বলে বসেন, “এরকম মাত্র এক দিনের ঘটনার জন্য আমরা পুরো অ্যাপ্রোচে কোনো পরিবর্তন আনব না৷”

এই মন্তব্য করার কয়েকদিন পর তিনি তার বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়তে যা করা প্রয়োজন তা করা হবে৷

লাশেটের এমন আচরণে অনেকে মনে করছেন তিনি খুব দ্রুত তার নীতি ও সিদ্ধান্ত বদলান৷