সন্ত্রাসের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত ‘হোটেল রুয়ান্ডা’ হিরো

১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যা থেকে সহস্রাধিক মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে বিশ্বে অস্কার-মনোনীত ‘হোটেল রুয়ান্ডা’ ছবির হিরো হিসেবে পরিচিতি পাওয়া পল রুসেসাবাগিনাকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2021, 03:48 PM
Updated : 20 Sept 2021, 04:35 PM

সম্প্রতি কয়েকবছরে ৬৭ বছর বয়সী রুসেসাবাগিনা রুয়ান্ডা সরকারের কট্টর সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন। সোমবার রুয়ান্ডা আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে একটি বিদ্রোহী দলকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে।

২০১৮-২০১৯ সালে বন্দুক, গ্রেনেড হামলা এবং অগ্নিসংযোগের একাধিক ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যুর জন্য বিদ্রোহী দলটিকে দায়ী করা হয়।

৭ মাসের বিচার প্রক্রিয়ার শেষে বিচারপতি বিয়াট্রিস বলেন, “তিনি (রুসেসাবাগিনা) একটি সন্ত্রাসী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেটি ‍রুয়ান্ডায় হামলা চালিয়েছে। তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছিলেন।”

বিবিসি জানায়, বিচারের জন্য রুসেসাবাগিনাকে অপহরণ করে এবং নির্বাসন থেকে জোর করেই রুয়ান্ডায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যা চলার সময় রাজধানী কিগালির একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক ছিলেন রুসেসাবাগিনা। গণহত্যায় আট লাখের বেশি তুতসি এবং হুতু নিহত হয়েছিল৷ রুসেসাবাগিনা সে সময় ১২শ’র মতো মানুষকে হোটেলে আশ্রয় দিয়ে তাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন৷

রুসেসাবাগিনার জীবনকাহিনী নিয়ে পরে হলিউডে ‘হোটেল রুয়ান্ডা’ নামের ছবি তৈরি হয়, যার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ডন শ্যামলের৷ ছবিটির কিছু অংশ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সেটি অস্কারে মনোনয়ন পায় এবং পল রুসেসাবাগিনাও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদকে ভূষিত হয়ে খ্যাতি কুড়ান৷

পরবর্তীতে রুসেসাবাগিনা ক্রমেই রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের ঘোর সমালোচক হয়ে ওঠেন। কাগামেকে স্বৈরশাসক বলে নিন্দা করা এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে রুসেসাবাগিনার সমালোচনা বাড়তে থাকলে তিনি রাষ্ট্রের চোখে শত্রু হয়ে যান।

২০২০ সালের অগাস্টে রুসেসাবাগিনা রুয়ান্ডায় গ্রেপ্তার হন এবং সহিংস ও সশস্ত্র চরমপস্থি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। আর এখন তাকে সন্ত্রাসের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করাটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং লোকদেখানো বিচার বলেই মনে করছেন রুসেসাবাগিনার সমর্থকরা।

বিবিসি জানায়, রুসেসাবাগিনা মানবাধিকারের অপব্যবহার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন এবং রুয়ান্ডা সরকার হুতুদেরকে দমনপীড়নের নিশানা বানাচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন।

নির্বাসনে থাকার সময় রুসেসাবাগিনা একটি বিরোধী কোয়ালিশনের নেতৃত্ব দিতেন। সেই কোয়ালিশনের একটি সশস্ত্র শাখা ছিল। আর তা হচ্ছে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন)। ২০১৮ সালে এক ভিডিও বার্তায় তিনি শাসনক্ষমতা পরিবর্তনের ডাক দিয়ে বলেছিলেন, “রুয়ান্ডায় পরিবর্তন আনতে আমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে মাঠে নামার সময় এসেছে।”

এই এফএলএন এর বিরুদ্ধেই ২০১৮ সালে হামলা চালানোর অভিযোগ আছে। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাদের হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছিল। তবে রুসেসাবাগিনা বলছেন, তিনি কখনও সাধারণ মানুষকে হামলার নিশানা করার নির্দেশ কাউকেই দেননি। তবে এফএলএন কে অর্থ পাঠানোর কথা তিনি স্বীকার করেছেন।

এবছর মার্চে বিচার শুরুর পরই রুসেসাবাগিনা সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছেন না অভিযোগে বিচারপ্রক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।

বিবিসি’র খবরে বলা হয়, রুসেসাবাগিনার পাশাপাশি আরও ২০ জনের বিচার হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন এফএলএন এর সদস্যও আছে। বিচারপ্রক্রিয়ায় কৌসুঁলিরা রুসেসাবাগিনার সাজা হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছেন।