উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং সম্প্রতি দক্ষিণ থেকে তাদের দিকে বেলুন পাঠানো ব্যক্তিদের কড়া সমালোচনা করার পর সিউলের দিক থেকে এ ঘোষণা এল।
বছরের পর বছর ধরে পক্ষত্যাগী উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকারকর্মীরা উত্তরের শাসনব্যবস্থা ও এর নেতাদের সমালোচনা করে বেলুনের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে আসছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এখন এসব বেলুনকে ‘উত্তেজনা’ সৃষ্টির কারণ হিসেবে দেখছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
সিউল এমনটা ভাবলেও উত্তর কোরিয়ায় বেলুন পাঠানো বন্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে ‘ফাইটারস ফর এ ফ্রি নর্থ কোরিয়া’ নামের একটি গোষ্ঠী। বেলুনে করে পাঠানোর জন্য নতুন করে আরও দশ লাখ লিফলেটের ক্রয়াদেশও দিয়েছে তারা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ থেকে বেলুনে বার্তা পাঠানো হলেও আগে বেলুনের সঙ্গে ডলার, চকলেটসহ আরও অনেক কিছু উত্তর কোরিয়ায় পাঠানো হত।
২০১৪ সালে উত্তর কোরিয়ার সেনারা তাদের দিকে আসা এরকম বেলুনগুলো গুলি করে নামানোর চেষ্টা করে; ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই কোরিয়ার সেনাদের মধ্যে গুলিবিনিময়েরও ঘটনা ঘটেছিল।
দক্ষিণের বেলুন পাঠানোর পাল্টায় আগে উত্তর কোরিয়াও হিলিয়াম বেলুনে করে দক্ষিণে ‘শত্রুতামূলক কিংবা কাণ্ডজ্ঞানহীন পদক্ষেপ’ বন্ধের আহ্বানসহ নানান বার্তা পাঠাত।
বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ’তে প্রকাশিত কিম ইয়ো জংয়ের বিবৃতিতে সম্প্রতি সীমানা পেরিয়ে আসা বার্তাগুলোর জন্য উত্তরের পক্ষত্যাগীদের দোষারোপ করা হয়েছে।
“আমি বিস্মিত হয়ে পড়ি, এ বোকা পক্ষত্যাগীরা কিরকম ইতর প্রজাতির বিশ্ব যদি তা জানতে পারত,” বলেছেন জং।
উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতার এ বোন নিজেও বেশ প্রভাবশালী। বিবৃতিতে তিনি উত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগীদের ‘শংকরজাতীয় কুকুর’ অ্যাখ্যা দিয়ে এদের মালিক দক্ষিণ কোরিয়াকে বেলুনে বার্তা পাঠানোর জন্য জবাবদিহি তরা উচিত বলেও মন্তব্য করেন।
বেলুন পাঠানো বন্ধ না হলে দুই কোরিয়ার মধ্যকার সামরিক চুক্তি বাতিল, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার লিয়াজোঁ কার্যালয় বন্ধ এবং কায়েসং শিল্পপার্কে দুই কোরিয়ার যৌথ উদ্যোগ থেকে পিয়ংইয়ংকে সরিয়ে নেয়ারও হুমকি দেন জং।
এর প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার উত্তরে বেলুন পাঠানো বন্ধে আইন প্রণয়নের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানায়।
“সত্যিকার অর্থে, উত্তরে পাঠানো বেলুনগুলোর বেশিরভাগ শেষ পর্যন্ত আমাদের ভূখণ্ডেই পাওয়া যায়। সেগুলো পরিবেশ দূষণের কারণ হয়; স্থানীয় লোকদেরও এগুলো সরানোর জন্য অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়। এসব লোকদের জীবন ও সম্পদের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে এমন কর্মকাণ্ড অবশ্যই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন,” বলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়ো সাং-কে।
তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের এমন ভাবনাকে আমলেই নিচ্ছেন না ‘ফাইটারস ফর ফ্রি নর্থ কোরিয়ার’ চেয়ারম্যান পার্ক সাং হাক।
পার্কের সংগঠন গত বছর ১১ বার আর এ বছর আরও তিনবার উত্তর কোরিয়ায় লিফলেট পাঠিয়েছে; সর্বশেষ রোববার তাদের লিফলেট দক্ষিণের সীমান্ত অতিক্রম করে উত্তরে পড়ে। এসব লিফলেটই কিম ইয়ো জংকে ক্ষুব্ধ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
“দক্ষিণ কোরিয়া সার্বভৌম। এ গণতান্ত্রিক দেশটির নাগরিকদের তিনটি মৌলিক অধিকার আছে, যার একটি হচ্ছে বাকস্বাধীনতা। আমি, পার্ক সাং হাক, পিয়ংইয়ংয়ে বাস করি না এবং কিম পরিবারের একনায়কতন্ত্রের দাসও নই।
“আমি দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। পুনরেকত্রীকরণ মন্ত্রণালয় গত ১৫ বছর ধরে এ আইন করতে চাইছে, করতে বলুন। আমরা এখন ৫জি দুনিয়ায় বাস করি। যদি লিফলেট আটকায়, তাহলে আমরা ড্রোন পাঠাব। তারা আমাদের রুখতে পারবে না। তথ্য ও সত্যকে থামানো যাবে না। সত্যান্বেষী ৪৫ হাজার পক্ষত্যাগীর কণ্ঠ সরব থাকবে,” বলেছেন পার্ক।