নেতাদের কারাদণ্ডে বার্সেলোনায় তুমুল বিক্ষোভ, সড়কে আগুন

স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালুনিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করতে চাওয়া রাজনৈতিক নেতাদের কারাদণ্ডের প্রতিবাদে বার্সেলোনাজুড়ে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2019, 07:46 AM
Updated : 17 Oct 2019, 07:46 AM

বিক্ষোভকারীরা বুধবার শহরটির বিভিন্ন সড়কে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে পেট্রল বোমা ছুড়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

২০১৭ সালে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় কাতালুনিয়ার বিভক্ত হওয়ার তাড়না পুরো স্পেনকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

সোমবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ওই আন্দোলন, গণভোট এবং তার পরবর্তী স্বাধীনতা ঘোষণা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় রাজনীতিবিদ ও নেতাকে সর্বোচ্চ ১৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দিলে বিক্ষুব্ধরা ফের রাস্তায় নামে।

বুধবার দিনভর সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখা গেলেও রাতে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

কাতালান আঞ্চলিক সরকারের নেতা কুইম তোরা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।  

“সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি আমরা। দেশে এমনটা হতে দিতে পারি না আমরা। এগুলো এখনই বন্ধ করতে হবে,” মধ্যরাতের পর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে তাকে এমনটাই বলতে দেখা যায়।

বিক্ষোভকারীরা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে মলোটোভ ককটেল, পেট্রল বোমা ও এসিড ছুড়েছে বলে দাবি পুলিশের। কোনো কোনো স্থানে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশকে লাঠিচার্জ ও ফোমের প্রজেক্টাইল ছুড়তে দেখা গেছে বলেও রয়টার্সের প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন।

স্পেনের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকার এ পরিস্থিতিতে তড়িৎ ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।

“সমগ্র পরিস্থিতিই যে সরকারের বিবেচনায় আছে, কাতালান জনগণ এবং স্পেনের সমাজের সবারই তা জানা উচিত,” মাদ্রিদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন সোশালিস্ট পার্টির এ শীর্ষ নেতা।

নভেম্বরে হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনে ফের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকা সানচেজের ওপর কাতালুনিয়া নিয়ে শক্ত অবস্থান এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়া বিষয়ে ডানপন্থি দলগুলোর ব্যাপক চাপ আছে।

“সানচেজকে অবশ্যই কাতালুনিয়ায় সরাসরি কেন্দ্রের শাসন চালু করতে হবে,” বলেছেন উদারপন্থি সিউদাদানোসের নেতা আলবার্ট রিভেইরা।

বুধবার দিনের বেলায় বিক্ষোভকারীরা বার্সেলোনার বেশকিছু সড়ক ও রেল লাইন বন্ধ করে দেয়। আঞ্চলিক সরকার প্রধান তোরা নিজেও ‘স্বাধীনতাপন্থিদের ঘাঁটি’ খ্যাত জিরোনা শহরের একটি বিক্ষোভে অংশ নেন। আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সঠিক উপায়ে বিক্ষোভের উদাহরণ দেখাতে ওই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন বলে পরে জানান তিনি।

সূর্য ডোবার পরপরই কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী, যাদের অধিকাংশই তরুণ, বার্সেলোনার কেন্দ্রস্থলের একটি প্রধান সড়কে জড়ো হয়ে স্বাধীন কাতালানের পতাকা উড়াতে থাকে; তারা শূন্যে টয়লেট পেপারও ছুড়ে মারে।

“জনগণের নজর আমাদের দিকে আনতে গোলমাল করাই একমাত্র পথ,” বলেছেন ইসাক গ্রানা নামের এক বিক্ষোভকারী। ১৮ বছরের এ শিক্ষার্থীর মতে, ২০১২ সাল থেকে তারা যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন তাতে কাজ না হওয়ায় বিক্ষোভকারীরা এখন জ্বালাও পোড়াওয়ে নেমেছে।

জরুরি বিভাগ পরে বার্সেলোনা ও বিভিন্ন শহরে বুধবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ৫২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।